• বাংলা ফর্মে টিকিট বুক হবে না, বিক্ষোভ বাড়ছে বঙ্গে
    এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সমস্যাটা এক দিনের নয়। এ সমস্যা মিটেও মেটে না। ফিরে ফিরে আসে। ফলে বাংলা বনাম হিন্দির লড়াইয়ের পাকাপাকি সমাধানও হয় না।

    ফর্ম ছাপানো বাংলায়। বিকল্প ইংরেজিও রয়েছে উল্টো পিঠে। স্বাভাবিক ভাবেই বহু বাঙালি দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট বুকিংয়ের জন্য বাংলাতেই ফর্ম পূরণ করছেন। আর গোল বাধছে সেখানেই। বুকিং কাউন্টারের অনেক কর্মী সরাসরি বলছেন বলছেন, তিনি বাংলা বোঝেন না। ফলে ইংরেজি বা হিন্দিতে ফর্ম ভরতে হবে। কিন্তু একজন বাঙালি বাংলায় দাঁড়িয়ে কেন নিজের মাতৃভাষায় ফর্ম ভরতে পারবেন না? এই প্রশ্নে শুরু হয়ে যাচ্ছে তর্কাতর্কি। হামেশাই কোনও না–কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রেলরক্ষী বাহিনীকে হস্তক্ষেপও করতে হচ্ছে।

    সম্প্রতি বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, তামিলনাড়ুর মতো সব সরকারি জায়গায় হিন্দি মুছে দেওয়া উচিত কি না। কেন বাংলা জানা কর্মী কাউন্টারে রাখা হবে না, উঠছে সে প্রশ্নও। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, ‘এমনটা ঘটা উচিত নয়। বাংলা ফর্ম বাংলাতেই পূরণ করা যাবে। ইংরেজি ফর্ম পূরণ করতে হবে ইংরেজিতে। বাংলা ফর্ম বাংলা ভাষায় পূরণ করলে সেই ফর্ম বুকিং কাউন্টারে নিতে অস্বীকার করতে পারে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

    দিনকয়েক আগে শঙ্খ দত্ত নামের এক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন, রবীন্দ্রসদন মেট্রোর পাশের বুকিং কাউন্টারে তিনি টিকিট বুক করার জন্য বাংলায় লেখা ফর্ম পূরণ করেন। বোঝার সুবিধার্থে নামগুলি রোমান হরফেও লিখেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কাউন্টারের কর্মী তাঁকে বলেন যে, সরকার হিন্দি আর ইংরেজিতে ফর্ম দিয়েছে। সুতরাং এই দুই ভাষাতেই ফর্ম পূরণ করতে হবে।

    বাংলা ভাষার ফর্মে টিকিট বুক করা যাবে না। আর বাংলা ফর্মে টিকিট বুক করতে হলে সকালে আসতে হবে। শঙ্খ জানিয়েছেন, তিনি ওই বুকিং ক্লার্কের কাছ থেকে জানতে চান এমন নিয়ম কোথায় লেখা আছে? এতে তর্ক বেধে যায়। কিছু যাত্রী শঙ্খের পক্ষ নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই ফর্মের ভিত্তিতেই তাঁর টিকিট বুক করে দেওয়া হয়। তবে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কাউন্টার থেকে রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের ডাকা হয়। তাঁরা এসে অবশ্য শঙ্খদেরই সহযোগিতা করেন।

    সম্প্রতি ফেসবুকে আরও একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এক বৃদ্ধ বাংলা ফর্ম হাতে বলছেন, ‘কেন আপনি টিকিট বুক করে দেবেন না?’ বুকিং ক্লার্কের জবাব, ‘আমি বাংলা জানি না। আপনি হিন্দিতে বা ইংরেজিতে লিখুন।’ তখন অন্য যাত্রীরা প্রশ্ন করেন, ‘তা হলে বাংলা ফর্ম কেন আপনারা ছাপিয়েছেন? আপনি লিখে দিন যে, সরকারি চেয়ারে বসে সরকারের ছাপানো বাংলা আপনি ফর্মে টিকিট বুক করতে পারবেন না।’ শেষ পর্যন্ত অন্য যাত্রীরা প্রতিবাদ করায় ইংরেজি বানান জেনে নিয়ে টিকিট বুক করে দেন ওই কর্মী।

    বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘জাতীয় বাংলা পরিষদ’-এর সভাপতি চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। হিন্দিভাষী রাজ্যে কোনও বুকিং ক্লার্ক যদি বলেন তিনি হিন্দি ফর্মে বুকিং করতে পারবেন না, তা হলে পরিণতি কী হতে পারে সকলেই জানেন। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছেন। কিছু সংগঠন আন্দোলন করছেন। কিন্তু সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক সমর্থন না–থাকলে তা সফল হবে না। তামিলনাড়ুতে কিন্তু সাধারণের আন্দোলনে রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)