অরূপ বসাক: একের পর এক হাতির আক্রমণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় চিন্তিত বন দপ্তর থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমীরা। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ থেকে বনবস্তির মানুষেরা। উল্লেখ্য গত ৫ দিনে মালবাজার মহকুমা হাতির আক্রমণ চারজনের মৃত্যু এবং দুজন আহত হয়েছে। তারমধ্যে শুধুমাত্র ক্রান্তি ব্লকেই দুদিনে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন বন দফতর। ক্রান্তি ব্লকে যে তিনজন হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে তারা সকলেই জঙ্গলের ভিতরে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মারা যান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। যে তিনজন মারা গেছে, তার মধ্যে একজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ। আহত হয়েছে আরো দুই মহিলা।
এর আগে গত ৩ তারিখ চাপরামারি জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে বাইকে করে স্বামী স্ত্রী যাওয়ার সময় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় এক মহিলার। আহত হয় স্বামীও।
গত কয়েক মাস যাবত দেখা যাচ্ছে হাতির আনাগোনা বেড়েছে লোকালয়ে। তবে সব থেকে বড় বিপদের কারণ হল বিভিন্ন জঙ্গলে দিনের আলো ফুটতেই বহু মানুষ এবং মহিলারা জ্বালানি সংগ্রহের জন্য জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। জঙ্গলের ভেতর থেকে শুকনো ডালপালা সংগ্রহ করতে গিয়েই বড় বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। এইভাবেই জালানি সংগ্রহ করতে গিয়েই বারবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হলেও কিছু মানুষ তা শুনছে না। বনদফতরের বিনা অনুমতিতেই জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করছে জ্বালানি সংগ্রহ করতে। গত দুদিনে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার পর সোমবার মালবাজার মহকুমার ক্রান্তি ব্লকের কাঠামবাড়ি বনদফতর এর উদ্যোগে বন বস্তি এলাকায় এক অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্প করা হল।
গত শনিবার এবং রবিবার ক্রান্তি ব্লকের আপালচাঁদ বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির আক্রমণে তিনজনের মৃত্যু হয় এবং দুজন গুরুতর আহত হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসলো আপালচাঁদ বনবিভাগ। ইতিমধ্যে ক্রান্তি ব্লকের বনাঞ্চল লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামে বন বিভাগের তরফ থেকে সচেতনতামূলক শিবিরের মধ্য দিয়ে জনসাধারণকে সচেতনতা বার্তা তুলে দেওয়ার কাজ বনবিভাগ থেকে শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল বেলা রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আনন্দপুর চা বাগানের পাকালাইন সংলগ্ন এলাকায় আপালচাঁদ বন বিভাগের তরফে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রান্তি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির বন কর্মাধ্যক্ষ পরিশ্রম চিক বড়াইক বৈকন্ঠপুরের এডিএফও ম্যাডাম মানজিলা তিরকি, কাঠামবাড়ি রেঞ্জ অফিসার নবাঙ্কুর ঘোষ -সহ বনবিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মী এছাড়াও ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যাগণ। উপস্থিত সকল চা বাগান বাসিন্দাদের জানানো হয় যে বর্তমানে শুকনো মৌসুমে জঙ্গলে গাছের পাতা শুকনো হয়ে পড়ে রয়েছে সেগুলোতে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে না দেয় এ ছাড়াও জঙ্গলের ভিতরে সম্পূর্ণ রূপে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বন আধিকারিকেরা জানান, জঙ্গলে বুনো হাতির দল ঘোরাঘুরি করছে তাই কেউ জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করবেন না এবং গ্রামেগঞ্জে হাতি ঢুকে পড়লে দ্রুত বন দপ্তরকে খবর দিন।
এব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হিমালয়ান ইকোলজি ফাউন্ডেশনের অন্যতম সদস্য মৃনাল সিংহ রায় বলেন, বার বার এওয়ারনেস করার পরও কিছু মানুষ শুনছে না। মাঝেমধ্যেই দেখা যায় জঙ্গলে রাস্তায় অবাধে চলছে টোটো রিস্কা। এখানেও বিপদ ঘটতে পারে। জঙ্গলে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দুদিক দেখে গাড়ি বা বাইক চালানো উচিত। এব্যাপারে আমাদের সংগঠন থেকেও বন বস্তিতে ক্যাম্প করবো আমরা।
বিগত দিনে হাতির আক্রমণে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে যেমন...
১) ২০২৪ সালে ১০ই ডিসেম্বর চালসার মঙ্গলবাড়ী বাজারে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় ছয় বছরের এক শিশুর।
২)২০২৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি নাগরাকাটার খেরকাটা জঙ্গলে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার।
৩)২০২৫ সালে ২০ জানুয়ারি গরুমারা গরাতি ক্যাম্পে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় এক পাতা ওয়ালার।
৪)২০২৫ সালের ৩রা এপ্রিল চাপরামারি জঙ্গল দিয়ে বাইকে করে যাবার সময় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় এক মহিলার।
৫)২০২৫ সালের ৫ই এপ্রিল তার ঘেরা জঙ্গলে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয় এক মহিলার।
৬)এবার ২০২৫ সালের ৬ই এপ্রিল ক্রান্তি ব্লকের ষোলঘরিয়া এলাকায় জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির।
৭)২০২৫ সালে ৬ই এপ্রিল ক্রান্তি ব্লকের বারঘরিয়া এলাকায় জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির আহত দুই মহিলা।
৮)২০২৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি হাতির আক্রমণে দুই কৃষক আহত হয় গজলডোবার ৭ নাম্বার কলোনীতে।