• শিক্ষক মাত্র ১৩ জন, চাকরি হারালেন ৫, অথৈজলে বল্লা বিদ্যাপীঠ...
    ২৪ ঘন্টা | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
  • সৌরভ অধিকারী: আজ নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেছেন সকল চাকরিহারারা। বর্তমানে স্কুলের যা অবস্থা তাতে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে কোনও কি সমাধেন মিলবে এখন তাই দেখার। এই অবস্থার মধ্য়ে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে বল্লা বিদ্যাপীঠ উচ্চমাধ্যমিক স্কুল।

    শিক্ষকের অভাবে বল্লা বিদ্যাপীঠ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ক্লাসে নেই শিক্ষক, তাই পড়ুয়াদের যেমন পড়াশোনা হচ্ছে না তেমনই, শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি তাঁদেরও করতে হচ্ছে নানান কাজ।

    ক্লাসে বাচ্চারা একাই পড়াশোনা করছে। কোন স্যার নেই। বলা ভালো তাদের স্যারের চাকরি বাতিল হয়েছে তাই স্যার আসেননি আর স্কুলে। ইলেভেন টুয়েলভ এর ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রির স্যার আর আসবেন না। ফলে বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধ রাখা ছাড়া খুব একটা করার কিছু নেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের।

    ওই শিক্ষকরাই নবম, দশম এর সাইন্স এর ক্লাস নিতেন। ফলে চরম সমস্যায় স্কুলের ছাত্র শিক্ষক সবাই।

    বল্লা বিদ্যাপীঠ উচ্চমাধ্যমিক ক্লাস ৫ থেকে ১২ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৭৮০ জন। শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ১৩, গ্রুপ ডি দুজন এবং গ্রুপ সি ১জন।

    ২৬হাজার এর তালিকায় এই স্কুলের ৩জন টিচার এবং ২জন গ্রুপডি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। ফলে আজ থেকে স্কুলের ঘন্টা বাজাচ্ছেন স্যার। পরীক্ষার জন্য ছাত্রদের সহায়তায় ক্লাস রুম ঠিক করা হচ্ছে।

    তিনজন শিক্ষক এর মধ্যে একজন শিক্ষক বিশেষভাবে সক্ষম। তিনি স্কুলে এলেও আগামী দিনের কথা ভেবে ক্লাস ও করতে পারছেন না ঠিক করে। বাড়তে বয়স্ক বাবা, মা, ছোট বাচ্চা, স্ত্রী সবাই কে নিয়ে অতল জলে পরেছেন।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন সাইন্স এর অংশটা আপাতত বন্ধ থাকবে। তার কারন টিচার নেই।

    তবে যারা এবার সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কথা ভেবে স্কুল দপ্তর কে বিষয়টা জানিয়েছেন। এখনো কোনো নির্দেশ আসেনি। তাই স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে।

    বল্লা বিদ্যাপীঠ স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক সমজিত্‍ মাইতি বলেছেন, 'হঠাত্‍ করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের ছাঁটাই করার ফলে আমাদের স্কুল থেকে ছাঁটাই হয়েছে ৩জন শিক্ষক ও ২জন শিক্ষাকর্মী। এর ফলে আমাদের নিজেদেরই সব কাজ করতে হচ্ছে। পরশুদিন থেকে আমাদের স্কুলে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী অবধি। ফলে বেঞ্চ ঠিক করা থেকে শুরু করে ক্লাসরুম পরিস্কার সব কাজেই পড়ুয়ারা আমাদের সহযোগীতা করছে। এরফলে ওদেরও অনেক অসুবিধা হচ্ছে, পড়াশোনাতেও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু ওরা বাধ্য হয়েই এই কাজ করছে। আমরাও এখানে অপরাগ। আমাদেরও দেখে খুব খারাপ লাগছে। ওরা বুঝতে পারছে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে, তাই ওরা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।'

    ভূগলের শিক্ষক শুভঙ্কর আচার্য বলছেন, 'আমাদের স্কুলের শিক্ষক, অশিক্ষক না থাকায় খুব অসুবিধা হচ্ছে, ঘন্টা বাজাবারও কেউ নেই। আমাদেরই সব করতে হচ্ছে। এমনকি বেঞ্চও সরাতে হচ্ছে আমাদেরই। আমাদের সঙ্গে কাজ করছে আমাদেরই স্কুলের পড়ুয়ারা। তারওপর আবার আমাদের স্কুলে পরীক্ষা। খুবই অসুবিধায় পড়েছি আমরা। সব থেকে বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়েছে স্কুলের পড়ুয়ারা।'

    চাকরিহারা সঞ্জিব পয়রা জানাচ্ছেন, 'বাড়িতে কারোর দিকে তাকাতে পরছি না। আমার একটা ৩ বছরের মেয়ে আছে, বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে, এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। বাচ্চাদের সামনে পরীক্ষা এই অবস্থায় কীভাবে আমি ওদের ছেড়ে দিই বলুন! তাই এই অবস্থায়ও আমি ওদের ক্লাস নিতে আসছি। আমাদের স্কুল থেকে ৫জনের চাকরি চলে গেছে।'

    ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পলাশ চন্দ্র বলছেন, 'আমাদে ছাত্র সংখ্যা ৭৮০জন। শিক্ষক সংখ্যা এতদিন ছিল ১৩জন, অশিক্ষক কর্মী ছিলেন ৩জন। এই মুহূর্তে আমাদের স্কুলে ৩জন শিক্ষক ও ২জন অশিক্ষক কর্মচারি চলে গেলেন। আমাদের স্কুলে গ্রুপ ডি পদে কোনও কেউই রইলেন না। সবথেকে বড়ো অসুবিধা আমাদের উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের একজন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক এবং একজন রসায়নের শিক্ষক চলে গেলেন। এরফলে আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ওরাই আমাদের স্কুলে নবম, দশমশ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ পড়াতেন। এখন তা পড়াবারও কোনও শিক্ষক নেই। আমরা ডিআই অফিসে গেছি। অসুবিধার কথাও জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়। আমাদের হাতে কিছুই নেই।'

    সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অথৈজলে বল্লা বিদ্যাপীঠ স্কুল। বিজ্ঞান বিভাগেকে ক্লাস নেবে সেটাই এখন দেখার। আর কেউ বিজ্ঞান বিভাগে না থাকায় প্রবল অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন এই স্কুলের সকল পড়ুয়ারা। 

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)