• ‘শিক্ষার আলোয়’ প্রবীনদের হাতেখড়ি দিচ্ছে কস্তুরীরা
    এই সময় | ০৭ এপ্রিল ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    কখনও নিরক্ষর বৃদ্ধ বাবা-মাকে কৌশলে টিপ সই দিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছেন সন্তান। আবার কখনও লেখাপড়া না জানা বয়স্কদের ঠকিয়ে তাঁদের জমি কেড়ে নিচ্ছে মাটি মাফিয়া। বার বার খবরে উঠে আসা সেই সব বঞ্চনার ঘটনা দেখে নিজেদের শান্ত রাখতে পারেননি মালদার এক দল তরুণী। এলাকার নিরক্ষর বয়স্কদের লেখাপড়ায় হাতেখড়ির দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে পাঠদান করে চলেছেন তাঁরা। ১৫–২০ জনের এই দলে কেউ গৃহ শিক্ষক, তো কেউ আবার বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। নিজেদের সংসার সামলে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচদিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে শিক্ষাদানের উদ্যোগ নিয়েছেন কস্তুরী দেব ঘোষ, সোমা দাস, প্রীতি মণ্ডলরা।

    কখনও আম বাগানে খোলা আকাশের নীচে, আবার কখনও কারও বাড়ির বারান্দাকেই পাঠশালা বানিয়ে চলছে শিক্ষাদান। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে এই উদ্যোগ। সরকারি ভাবে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে সোমারা নিজেরাই খুলে ফেলেছেন ‘শিক্ষার আলো’ নামে একটি সংগঠন। জেলার গ্রাম থেকে শহর, বিভিন্ন এলাকায় চলছে সাক্ষরতার পাঠ।

    ওঁদের কথায়, ‘বয়স্কদের নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে কখনও টিপছাপের মাধ্যমে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাড়ি–জমি হাতিয়ে বাবা-মাকে সন্তান রেখে আসছেন বৃদ্ধাশ্রমে। কেউ আবার বাড়ি থেকেও বের করে দিচ্ছেন বয়স্ক মা–বাবাকে।’ বৃহস্পতিবার মঙ্গলবাড়ি এলাকায় নবান্ন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ‘শিক্ষার আলো’ নামে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে। এ দিন গ্রামের ৫০ জনেরও বেশি বৃদ্ধা সেই পাঠশালায় অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের হাতে আয়রন ট্যাবলেট ছাড়াও নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি করা হয় প্রাথমিক স্তরের পাঠদান। এখানে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন বয়স্ক মহিলাদের নিয়ে পাঠশালার আয়োজন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তাঁরা।

    মঙ্গলবাড়ি নবান্ন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি কস্তুরীর কথায়, ‘এলাকার নিরক্ষর বয়স্কদের স্বাক্ষর করে তোলার উদ্দেশ্যে এই প্রয়াস শুরু হয়েছে। কারণ, অনেকের হয়তো অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছে অথবা অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

    মঙ্গলবাড়ির অনিমা মণ্ডল, প্রতিমা হালদার, ইতু মণ্ডলের মতো ষাট পেরোনো বৃদ্ধারাও বলছেন, ‘আমাদের তিন কাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে। লেখাপড়া জানি না। বার্ধক্য ভাতা বা বিধবা ভাতা তুলতে ব্যাঙ্কে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। ফর্মে ঠিকমতো সই করতে পারি না। আমাদের টিপ সই–ই ভরসা। তবে এই বয়সে এসেও যে এ ভাবে লেখাপড়ার সুযোগ আসবে ভাবিনি। প্রথমে পাঠশালায় যেতে লজ্জা লাগলেও ওঁরাই আমাদের আগ্রহ দেখিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে গিয়েছে। সেখানেই আবার আমাদের নতুন করে হাতেখড়ি হলো।’

  • Link to this news (এই সময়)