এই সময়, জলপাইগুড়ি: গোরুমারার আওতাধীন চাপড়ামারি-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জঙ্গলে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা ১০০ শতাংশ 'ম্যান-মেড' বলে ঘোষণা করল বন দপ্তর। গোরুমারা জাতীয় উদ্যান, চাপড়ামারি অভয়ারণ্য-সহ উত্তরের প্রায় সব জঙ্গলেই কমবেশি আগুন লাগায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পরিবেশপ্রেমী মহলে। এখনও পর্যন্ত যে ক'টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সামনে এসেছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগুনের সূত্রপাত জঙ্গলের ভিতরের রাস্তার দু'পাশ থেকে। যে কারণে, সেগুলি ১০০ শতাংশ ম্যান-মেড বলেই দাবি করেছে জেলা বন দপ্তর। জঙ্গলে তাই বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি।
নির্দেশ মাফিক ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে প্রতিদিন বন দপ্তরের তরফে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল জে ভি ভাস্কর। তাঁর কথায়, 'জঙ্গলের কোথায় আগুন লেগেছে, কতটা জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সমস্ত কিছুর অ্যাসেসমেন্ট এবং ম্যাপিং করা হচ্ছে। সেই অনুসারে সেন্সিটিভ জায়গাগুলি চিহ্নিত করে সেখানে কাজ করছে বনকর্মীদের বিশেষ টিম।'
প্রতি বছর এপ্রিল ও মে-র শুকনো মরশুমে উত্তরের জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। তবে জলপাইগুড়ির চাপড়ামারি বনাঞ্চল ছাড়াও গোরুমারার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া চালসা- লাটাগুড়ি জাতীয় সড়কে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বন দপ্তরের কর্তাদের দাবি, জাতীয় সড়কে যাতায়াতের সময়ে মানুষের দ্বারাই কোনও ভাবে এই আগুন লাগছে। আগেও সেখানে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু জঙ্গলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কালঘাম ছুটছে বন দপ্তরের। তাই বনাঞ্চলে আগুন লাগার খবর দ্রুত জানতে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে তারা। যার মধ্যে রয়েছে রিয়েল টাইম অ্যালার্ট সিস্টেম। একই ভাবে জঙ্গলে বসেছে একাধিক ফায়ার ওয়াচার। আগুন নেভাতে আনা হয়েছে ফায়ার ব্লোইং মেশিন।
বনকর্তারা বলছেন, 'আগুন লাগার কিছুদিন পরে জঙ্গল তার আগের অবস্থায় ফিরলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে বন্যপ্রাণ। তাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও দাবানল পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে চাপড়ামারি জঙ্গল সংলগ্ন জলপাইগুড়ি বন বিভাগে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের পরে শনিবার গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের মেদলা ওয়াচ টাওয়ার লাগোয়া এলাকায় আগুন লাগে। যা নেভাতে হিমশিম খেতে হয়েছে বন দপ্তর, পুলিশ, দমকলকর্মী ও স্থানীয়দের।'
মুখ্য বনপালের কথায়, 'কোথায় আগুন লাগছে, তা চিহ্নিত করতে অধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। স্যাটেলাইট সিস্টেমের মাধ্যমে আগুনের ধোঁয়া চিহ্নিত করছে ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তখনই রিয়েল টাইম অ্যালার্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনকর্মীদের সেই খবর জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জঙ্গলের আগুন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ম্যান মেড। যার ব্যতিক্রম নয় উত্তরের জঙ্গলগুলি। তাই বন্যপ্রাণ সম্পর্কে সাধারণের আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।'