• ‘ভেবেছিলাম বাংলার নাম উজ্জ্বল হবে’, খাট-গাড়ি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় মন খারাপ নবাবের
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ভাইরাল হওয়ার বাসনা যত না ছিল, তার চেয়েও বেশি ছিল ভালোবাসা। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে বেকায়দায় ডোমকলের নবাব শেখ। ইঞ্জিন লাগানো বিছানা গাড়ি তৈরি করেছিলেন নবাব শেখ। সেটা চালিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। তারপর চোখের নিমেষে ভাইরাল সেই বিছানা-গাড়ি। ভাইরাল হওয়ায় নজরে পড়ে প্রশাসনের। তারপরেই ইঞ্জিন-সহ খাট বাজেয়াপ্ত। আর এর মাঝে থেকে জমানো ২ লক্ষ টাকার পুঁজিও শেষ নবাবের।

    ডোমকল পুলিশ তাঁর বিছানা-গাড়ি বাজেয়াপ্ত করায় বেজায় মন খারাপ নবাব শেখের। গলায় ঝরে পড়ল একরাশ অভিমান, বললেন, ‘নিজের শিল্পীসত্ত্বা দিয়ে এরকম একটি গাড়ি তৈরি করে ভেবেছিলাম প্রশাসন পাশে থাকবে। বাংলার নাম উজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছিলাম। উল্টে কিছুই পেলাম না। গাড়িটাই বাজেয়াপ্ত করে নিল।’ ভাইরাল হওয়া ‘বিছানা গাড়ি’ গত ৫ এপ্রিল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। থানা চত্বরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে সেটা।

    ডোমকল এসডিপিও শুভম বাজাজ বলেন, ‘মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট-এর সুনির্দিষ্ট কোন ধারায় ওই চলন্ত খাট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে ওই খাটের পক্ষে কোনও প্রমাণ নবাব শেখ দেখাতে পারেননি। কোনও বিমাও করা নেই। এখন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার দায় কে নেবে! তাই খাট বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয়েছে। কোর্টের নির্দেশ মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’

    পুল কারের ব্যবসা ছিল নবাবের। শখের এই বিছানা-গাড়ি তৈরি করতে নিজের ওই ব্যবসা সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছিলেন। বাজারে ধার-দেনা করে টাকা নিয়ে বানিয়েছিলেন ওই চলন্ত খাট। কিন্তু এখন পুরোটাই অথৈ জলে। ঋণ মেটানোর জন্য সোমবার থেকে আবার নিজের গাড়িতে স্কুল পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। ওই চলন্ত বিছানা তৈরির জন্য টানা ২ বছর লেগে থাকতে হয়েছে তাঁকে। ২০২৩-র ডিসেম্বর থেকে বানানোর কাজ শুরু হয়। ২০২৫-র ইদের দিন সেই চলন্ত খাট রাস্তায় নামতেই তা সুপারহিট। তবে বাংলাদেশের কয়েকজন যুবক তাঁর তোলা ওই ভিডিয়ো নিজেদের দাবি করে কপিরাইট আইনভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন। তার জেরে নবাবের সমাজমাধ্যম সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝকঝকে পিচ রাস্তার উপর দিয়ে ছুটেছিল বিছানা গাড়ি। ডোমকল পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২৭ বছরের নবাবের ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল, এমন কিছু একটা করে দেখাবেন যা তাঁকে ভাইরাল করবে। সেটা করেও ফেলেছেন। কিন্তু বাধ সাধল নিয়মের গেরো।

    আক্ষেপের সুরে নবাব বলেন, ‘বাবা-মা ও বউ বলেছে ওই বিছানা গাড়ির কথা ভুলে গিয়ে নিজের গাড়ি চালিয়ে আয় করার কথা। তাঁদের কথা শুনে সেটাই করব।’ ডোমকল থানায় পড়ে থাকা ওই গাড়ি একবারও দেখতে যাননি তিনি। কেন? নবাবের আক্ষেপ, ‘ওই গাড়ি আমার ভালবাসার। অযত্নে পড়ে আছে। দেখলে কষ্ট পাব। তাই যাইনি।’

  • Link to this news (এই সময়)