সম্প্রতি দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেল বাতিল হয়েছে। তার জেরে চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের। এর সঙ্গেই সঙ্গেই প্রবল ধাক্কা খেয়েছে রাজ্যের সরকারি ক্ষেত্রের শিক্ষাব্যবস্থা। এমন একাধিক স্কুল রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে একাধিক শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। তার জেরে ইতিমধ্যেই হোঁচট খেতে শুরু করেছে শিক্ষা পরিকাঠামো। সম্প্রতি নদিয়ার কালীগঞ্জের একটি স্কুলে পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরীক্ষা দিতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে ছাত্রীদের। নদিয়ার কালীগঞ্জ নজরুল স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাবেই পরীক্ষা বাতিল হয়েছে বলে খবর।
এই স্কুলে প্রায় এগারোশো জন ছাত্রী পড়াশোনা করে। এই স্কুলে ১৫ জন স্থায়ী শিক্ষক এবং ৯ জন পার্শ্ব শিক্ষক রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এই স্কুলে একসঙ্গে চাকরিহারা হয়েছেন ৬ জন শিক্ষক। এছাড়া একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও চাকরি গিয়েছে। এর ফলে এমনিতেই চরম সমস্যায় পড়েছে স্কুল। এই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত টেস্ট পরীক্ষা চলছে। এই অবস্থায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পার্শ্ব শিক্ষকদের তিনদিনের কর্ম বিরতি চলছে রাজ্যজুড়ে। এই কারণে স্কুলের ৯ জন পার্শ্ব শিক্ষকের কেউই স্কুলে আসেনি। দুইয়ের জেরে শিক্ষক সঙ্কটে পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ার পরে পার্শ্ব শিক্ষকদের ওপর অমানুষিক চাপ বেড়েছে। চাপ বাড়লেও সেই অর্থে বেতন বাড়ছে না। পার্শ্ব শিক্ষকদের বেতন মাত্র ১৩ হাজার টাকা। আর এই কারণেই বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সোমবার থেকে টানা তিন দিন কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা।’ তাঁর অভিযোগ, একই স্কুলে শিক্ষকতা করে অন্য শিক্ষকরা প্রায় এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি বেতন পান এবং একই কাজ করে পার্শ্ব শিক্ষকরা মাত্র ১৩ হাজার টাকা পান। এই কর্মবিরতির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে আরও বড় আন্দোলনে নামা হবে বলে জানিয়েছেন ভগীরথ ঘোষ।
পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘পার্শ্বশিক্ষকরা যে আন্দোলনে সামিল হচ্ছে সেটা আমরা রবিবার পর্যন্ত জানতাম না। শিক্ষকের অভাবে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণি বাদ দিয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শতরূপা দাস জানান, সোমবার স্কুলে এসে বিষয়টি জানতে পেরে পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। আজ, মঙ্গলবার পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।