• রিয়্যালিটি শোয়ে দ্বিতীয় শুভজিৎ উচ্ছ্বাসে ভাসছে খড়্গপুরের চেঙ্গুয়াল গ্রাম
    বর্তমান | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, খড়গপুর: চেঙ্গুয়াল গ্রামের ছোট্ট পানের দোকানটায় পানের টানে যত না ভিড় হতো তার থেকে বেশি ভিড় হতো গানের টানে। অল্পবয়সি ছেলেটা পান সাজতে সাজতেই একের পর এক গান গেয়ে যেত। রফি, কিশোর থেকে শুরু করে লোকসঙ্গীত পর্যন্ত। তারপরের ঘটনা ঠিক যেন রূপকথার গল্প। ছেলেটি উড়ে গেল স্বপ্নের শহর মুম্বইয়ে। সেখানে এক সর্বভারতীয় রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চে সে আজ রানার আপ। গায়িকা শ্রেয়া ঘোষাল থেকে বড় বড় সঙ্গীত পরিচালক, শিল্পীরা ছেলেটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আজ উচ্ছ্বাসে ভাসছে গোটা গ্রাম। বাবা-মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু। কোনওদিনও ছেলেটাকে ভালোমন্দ কিনে দিতে পারেননি। মেটাতে পারেননি শখ আহ্লাদ। অবশ্য সে ছেলেরও অন্য কিছু লাগত না গান গাইতে পারলে। এতক্ষণে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরে গিয়েছেন কার কথা হচ্ছে। হ্যাঁ, সে শুভজিৎ চক্রবর্তী। বাবা কৃষ্ণদাস গান শিখিয়েই সংসার চালাতেন। কিন্তু করোনার থাবায় সব যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখন পানের দোকান দিয়ে সংসার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মা বন্দিতা চক্রবর্তী আজ গৃহবধূ, কিন্তু এক সময়ে স্বামী কৃষ্ণদাসের সঙ্গে যাত্রায় অভিনয়ও করেছেন। ছোট্ট শুভজিৎও বাবা-মায়ের সঙ্গে যাত্রার মঞ্চ মাতিয়েছেন কচি গলার গানে। পরবর্তীকালে কৃষ্ণদাস একটি বাউল গানের দল তৈরি করেন। সেখানেও গেয়েছেন শুভজিৎ। রিয়্যালিটি শোয়ে দ্বিতীয় হওয়ার পর গ্রামবাসীরা ঢাকঢোল বাজিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামের ছেলেকে। গ্রামবাসীদের এই অভ্যর্থনায় আপ্লুত শুভজিৎ বললেন, পরিবার ও সবার সহযোগিতা ছাড়া এই সাফল্য পাওয়া যেত না। আগামী দিনে আরও বড় শিল্পী হতে চাই। আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। শুভজিতের সাফল্যে শুধু চেঙ্গুয়গাল গ্রামের মানুষই নয়, খড়্গপুর ২ ব্লক থেকে শুরু করে গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মানুষ। গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, অভাবকে জয় করেছেন শুভজিৎ। ইচ্ছে শক্তির চেয়ে বড় আর কিছুই নেই, তা আবারও প্রমাণিত হল। অল্প বয়স থেকেই বাবার কাছে গানের তালিম নিয়েছেন শুভজিৎ। আজও বাবাই তাঁর গুরু। শিখেছেন আধুনিক গান থেকে লোকসঙ্গীত। সংসারে অভাব সত্ত্বেও গানকে অবহেলা করেননি। বরাবরই বড় মঞ্চে গান গাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শুভজিৎ। তাঁর প্রতিভাকে বুঝতে বেশিদিন সময় লাগেনি সঙ্গীত বিশেষজ্ঞদের। ছেলের সাফল্যে চোখে জল নিয়ে শুভজিতের বাবা ও মা বলেন, ও খুব অভাবের মধ্যে বড় হয়েছে। দামি পোশাক, দামি খাবার কোনও সময় কিনে দিতে পারিনি। কিন্তু নিয়মিত রেওয়াজে কোনওদিন ফাঁকি দেয়নি। চাই ও দেশের নাম আরও উজ্জ্বল করুক। ওর সাফল্যে আমরা সকলেই খুব খুশি। গ্রামবাসী স্বপন মণ্ডল বলেন, ও আমাদের জেলা তথা রাজ্যের গর্ব। ওর গান শোনার জন্য শনিবার ও রবিবার অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম। ও অনেক দূর যাবে। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)