• দু’মুখো সাপ! মমতার কটাক্ষে পাল্টা শুভেন্দুর
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় সেই সিপিএম এবং বিজেপি! গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি–র ২০১৬–এর বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে হওয়া প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ একলপ্তে খারিজ করেছিল। সেই দিনই চাকরি বাতিল ইস্যুতে বাম–বিজেপিকে নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের সভা থেকেও একই সুর তাঁর গলায়। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতেই সিপিএম এবং বিজেপি চক্রান্ত করেছে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে রাজ‍নৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করতে এবং বিজেপি–র প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা না–দিতে চাকরিহারাদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও চাকরিহারা শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ২০১৮ সালে বামেদের হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। অথচ বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসার পরে চাকরিহারা শিক্ষকদের জন্য কোনও ব্যবস্থা করেনি পদ্ম–সরকার। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা ২০২৬ সালে বাংলায় ক্ষমতায় এসে শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা স্রেফ ভোট কুড়োনোর কৌশল বলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অভিযোগ।

    নেতাজি ইন্ডোরে মমতার ভাষণের সময়েই ঢিল ছোড়া দূরে বিধানসভার প্রাঙ্গণে পরিষদীয় দলকে নিয়ে এই ইস্যু নিয়ে অবস্থানে বসেছিলেন শুভেন্দু। সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরনোর পর থেকেই তিনি লাগাতার বলছে‍ন, ’২৬–এ বিজেপি ক্ষমতায় এলে ‘যোগ্য’দের ওএমআর শিট নিয়ে তাঁরা শীর্ষ আদালতে যাবেন, চাকরিহারাদের চাকরি ফিরিয়ে দেবেন।

    শুভেন্দু–সুকান্তদের এই প্রচারকে নিশানা করেই মমতা বলেন, ‘যাঁরা বলছেন ২০২৬ সালে (চাকরির ব্যবস্থা) করবেন... ত্রিপুরায় ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছিল। বিজেপি–র ম্যানিফেস্টোতে বলা হয়েছিল, তারা জিতলে সব শিক্ষকের চাকরি ফিরিয়ে দেবে। চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি, বরং যাঁরা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন, মেরে তাঁদের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। এদের বিশ্বাস করবেন না। এরা দু’মুখো কেউটে সাপ।’ শুভেন্দু পাল্টা বলেন, ‘এরা (তৃণমূল সরকার) ওএমআর শিট পুড়িয়ে দিয়েছিল। সিবিআই গাজি়য়াবাদ থেকে তা উদ্ধার করেছে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলে সিবিআই এই কাজ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী তো ক্যালকাটা বারের সদস্য! আপনি (মমতা) সুপ্রিম কোর্টে নিজে আইনজীবী হিসেবে যোগ্যদের ওএমআর তালিকা হাতে নিয়ে সওয়াল করুন।’

    রাজ্যে স্কুলে নিয়োগ নিয়ে ২০২২ সাল থেকে একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে এ দিন অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘২০২২ সাল থেকে একটা নোংরা খেলা শুরু করেছিল। চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, চাকরি কাড়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের আমি ধিক্কার জানাই! আপনাদের (চাকরিহারা) একটি জিনিস বুঝতে হবে, কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ। কারা যাত্রাপালার মাধ্যমে আপনাদের ভুল বোঝাচ্ছে।...কেউ যদি কোনও ভুল করে থাকে, তার দায়িত্ব আমরা কেন নেব?’

    এই ‘নোংরা খেলা’র প্রসঙ্গে বিকাশও কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা। বিকাশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘তুমি গিয়ে কেন (উচ্চ আদা‍লতে) অ্যাপ্লাই করলে? প্রথম প্রশ্ন আমার। বিকাশ ভট্টাচার্যকে রাজনৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করার উচিত নয় কি? সিপিএম এর উত্তর দিক। কেন সে এই সব তালিকাকে বাতিল করাচ্ছে? আমি তো চাকরি দিয়েছিলাম।’ মমতার প্রশ্নের উত্তরে পরে বিকাশ বলেন, ‘ওঁর কথায় একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল, যাঁরা দুর্নীতির বিপক্ষে তাঁরা বিকাশের দলে পড়েন, যাঁরা দুর্নীতির পক্ষে তাঁরা মমতার দলে পড়েন। উনি সজ্ঞানে নাকি অজ্ঞানে এই স্পষ্ট কথা বলে ফেললেন তা উনি জানেন।’

  • Link to this news (এই সময়)