এই সময়: আশ্বাসের পাল্টা আশ্বাস! কটাক্ষের পাল্টা কটাক্ষও! সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় তথাকথিত ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের হয়ে সবরকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে ধারালো ভাষায় নিশানা করেছেন সিপিএম–বিজেপিকে। এ দিন নেতাজি ইন্ডোরের সভা শেষ হওয়ার পরে স্টেডিয়াম ছেড়ে বিধানসভার সামনে দিয়ে ফিরছিলেন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। ঠিক সেই সময়ে বিধানসভার নর্থ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তাঁর কথা শুনতে দাঁড়িয়ে পড়েন একদল চাকরিহারা যুবক–যুবতী। সেটা নজরে আসতেই শুভেন্দু তাঁদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। এই চাকরিহারাদের ক্ষোভ, উদ্বেগ শুনে সাংবাদিকদের সামনেই শুভেন্দু আশ্বাস দেন, সুপ্রিম কোর্টে চাকরিহারারা আলাদা ভাবে আবেদন করলে তাঁদের আইনি সহায়তা দেবে বিজেপির পরিষদীয় দল। চাকরি হারানোর জন্য তাঁদের হতাশায় ভেঙে না–পড়ে মনোবল ধরে রাখতেও পরামর্শ দেন শুভেন্দু। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকেও নিশানা করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো এই শিক্ষকরা যাতে স্কুলে ‘ভলান্টারি সার্ভিস’–এ ঢুকে না–পড়েন, সে কথাও বলেছেন শুভেন্দু।
বিধানসভার নর্থ গেটের সামনে শুভেন্দু প্রায় ১৫ মিনিট চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলেন। এঁদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘আপনারা যদি ওএমআর শিট এবং শিক্ষাগত নথি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান, ব্যক্তিগত ভাবে আপনাদের কেউ যদি রিট পিটিশন করেন, আমরা আইনজীবী দেবো। আপনাদের টাকা খরচ করতে হবে না। আপনারা যে আইনজীবীকে চাইবেন, আমরা বিজেপির বিধায়করা বেতন থেকে চাঁদা তুলে সেই আইনজীবীর খরচ দেবো।’ বিধানসভার সামনে চাকরিহারা এক মহিলা শুভেন্দুকে বলেন, ‘নেতাজি ইন্ডোরে আমাদের কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
সেই মহিলার উদ্দেশে শুভেন্দু পাল্টা বলেন, ‘নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সঙ্গে ইন্টার্যাকশন হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ইন্টার্যাকশন কেন হলো না?’ অভিজিৎ দাস নামে এক চাকরিহারা শুভেন্দুর উদ্দেশে বলেন, ‘অনেকে নেতাজি ইন্ডোরে ঢুকতে পারেননি।’ তাঁকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দিন বলেছিলেন, ২৬ হাজার চাকরিহারার কথা শুনব। নেতাজি ইন্ডোরে সাত হাজার লোক ছিল। শুধু এঁরাই যোগ্য— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানলেন কী করে? চিন্তা করবেন না। আমরা পাশে আছি। আপনারা কেউ স্বেচ্ছাশ্রম দেবেন না। আপনারা কেউ সিভিক টিচার হবেন না।’ এমনকী গেরুয়া শিবিরের পরোক্ষ সমর্থনে আগামী ২১ এপ্রিল যে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই কর্মসূচিতে চাইলে এই চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা যোগ দিতে পারেন বলেও তাঁদের জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কয়েকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিরোধী দলনেতা এক যুবকের চোখের জল মুছে দিচ্ছেন— এই ছবিও দেখা গিয়েছে। শুভেন্দুকে ঘিরে একাধিক চাকরিহারা বলেন, ‘আমরা যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি, কারও দালালি করিনি। কাউকে টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি।’ চাকরিহারাদের এই ভিড়ের মধ্যে থেকে কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপের দাবিতেও সওয়াল করেন। যদিও শুভেন্দু বলেন, ‘এই নিয়োগ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা কম।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এঁদের আইনি সহায়তা থেকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনিও। যদিও শুভেন্দু–সুকান্তর এই আশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বামেরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সব থেকে বেশি দুর্নীতি হয়েছিল। সেখানকার প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু তো এখন বিজেপির হয়ে বিরোধী দলনেতা। এই নিয়ে সুকান্ত কী বলছেন?’