স্থায়ী সমাধান চাই, সাংবাদিক বৈঠক করে হুঁশিয়ারি যোগ্যদের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না। স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যোগ্য চাকরিহারারা। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর শহিদ মিনারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন যোগ্য চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ভলান্টারি সার্ভিস নয়, সবেতন চাকরি ফেরত দিতে হবে। আবার অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সাময়িকভাবে আশ্বস্ত হয়েছেন। বৈঠকের পর চাকরিহারাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেই প্রায় প্রত্যেকেই স্কুলে যেতে চান।
মমতার এ দিনের আশ্বাসে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না যোগ্য চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের মনে রয়েছে উদ্বেগ, শঙ্কা। তাই ‘আপাতত’ কোনও কিছুতেই তাঁরা ভয় মুক্ত হতে পারছেন না। তাঁরা চান, স্থায়ী সমাধান। চাকরিহারাদের অভিযোগ, সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষই তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে মানবিকভাবে তাঁদের বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আবার চাকরিহারাদের একাংশ মমতার আশ্বারে সাময়িকভাবে আশ্বস্ত হয়েছেন। তাঁরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে চান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যে পথ দেখিয়েছেন তাতেই ভরসা রাখছেন যোগ্য চাকরিহারাদের একাংশ। বৈঠকের পর চাকরিহারাদের মধ্যে এরকম ভিন্ন মত দেখা গেলেও প্রত্যেকেই স্কুলে যেতে চান, এবং যাবেনও। কিন্তু স্কুলে যাওয়া নিয়ে সকলের মধ্যে ধন্দ তৈরি হয়েছে। কাজ চালিয়ে গেলে তাঁরা বেতন পাবেন ? নাকি এটিকে স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে ধরা হবে তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।
সোমবার মমতার কাজে আট দফা দাবি জানিয়েছিলেন যোগ্য চাকরিহারারা। সেগুলি হল, সঠিক তথ্য ও নথি নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে রিভিউ পিটিশন দেওয়া যাবে না। রায় পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-হওয়া পর্যন্ত কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি পাঠানো যাবে না। চাকরিতে বহাল রাখতে হবে। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না। চাকরিহারারা নতুন করে পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে চান না। যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। সেই তালিকা নিয়ে রিভিউ প্রক্রিয়ায় যেতে হবে রাজ্যকে। সকল যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ করতে হবে। সমস্যার সমাধানে সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন চাকরিহারারা। সর্বদলীয় বৈঠকের আবেদনও জানানো হয়েছে। যোগ্য চাকরিহারাদের হয়ে লড়াই করার জন্য দক্ষ আইনজীবীর ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
এই সব দাবির প্রক্ষিতে নেতাজি ইন্ডোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ্য চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকতে যোগ্য একজনেরও চাকরি যাবে না। বরখাস্তের চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত বঞ্চিতদের স্কুলে যাওয়ার বার্তাও দেন তিনি। তারপরেও যদি আদালত নেতিবাচক কিছু বলে সেক্ষেত্রে তাঁর কাছে একাধিক বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়ে দেন মমতা। তিনি এদিন যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্যদেরও নিশ্চিন্তে থাকতে বলেছেন। এই বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না যোগ্য চাকরিহারারা। তাঁদের হুঁশিয়ারি, অযোগ্যদের জন্য যদি যোগ্যদের কোনও ক্ষতি হয় তাহলে ছেড়ে কথা বলা হবে না।