• রানওয়ের অ্যাপ্রোচে নির্মাণ, নামতে অসুবিধে বিমানের
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • বিমান যে পথে রানওয়েতে নেমে আসে, বিমান পরিবহণের পরিভাষায় তাকে ‘অ্যাপ্রোচ ফানেল’ বলা হয়। কল্পিত সেই পথে এমনকী তার আশপাশেও কোনও ধরনের বাধা (অবস্ট্রাকশন) থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে আইন খুব কড়া। কারণ, বিমান নিয়ে নামার সময়ে পাইলটের মনঃসংযোগ সর্বোচ্চ থাকার কথা। তখন কোনও ধরণের বাধার কারণে সেই মনঃসংযোগের সামান্য ব্যাঘাতে মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।

    কলকাতা বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ের যে দিকটা রাজারহাটের দিকে, সেই ‘জ়িরো ওয়ান লেফট (০১এল)’–এর ফানেলের আশপাশে এমনই কোনও নির্মাণের খোঁজ মিলেছে, যা ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই নির্মাণটি কৈখালির ভিতরের দিকে কোথাও হয়েছে।

    মনে করা হচ্ছে, তারই প্রেক্ষিতে ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন) সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, দ্বিতীয় রানওয়েতে নামার সময়ে কোনও ধরনের যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া যাবে না। কারণ, যন্ত্রের সাহায্য নিলেই বিমান অনেক নীচে নেমে এসে তারপরে ল্যান্ড করে। তাতে ওই অবস্ট্রাকশন–এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর যন্ত্রের সুবিধা না নিলে, মাটির পাঁচ হাজার মিটার উপর থেকে রানওয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলে তবেই নামা যাবে।

    বিমানবন্দরের আশপাশে যখনই কোনও নির্মাণ হয়, তখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নিতে হয়। ঠিক কোন জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে, তার ভিত্তিতে সেই নির্মাণের উচ্চতা নির্ধারণ করে দেন কর্তৃপক্ষ। অনেক ক্ষেত্রেই সেই উচ্চতার সীমারেখা না মেনে পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন আসে। সেটি দিল্লিতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তখন কিছুটা ছাড়ও মেলে। তবে, ছাড় দিলেও ডিজিসিএ–র নিয়ম যাতে লঙ্ঘিত না–হয়, তার দিকেও খেয়াল রাখা হয়। অভিযোগ, কৈখালির ওই নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি।

    সমস্যা অন্যত্র। কলকাতার আবহাওয়ায় সবসময়ে পাঁচ হাজার মিটার উপর থেকে রানওয়ে দেখা না–যেতেও পারে। সে ক্ষেত্রে ওই রানওয়ে ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই মূহূর্তে মূল রানওয়ের যে মুখটা বিরাটির দিকে, সেই ‘ওয়ান নাইনার লেফট (১৯এল)’–এর রানওয়ে বন্ধ রেখে কাজ হচ্ছে। জানা গিয়েছে, সেখানে কম দৃশ্যমানতায় ল্যান্ডিংয়ের জন্য আধুনিক ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ক্যাটিগরি–টু বসানো ছিল। তাকে আপগ্রেড করে ক্যাটিগরি–থ্রি করা হচ্ছে। ফলে, সেখান দিয়েও ল্যান্ডিং বন্ধ। টেক–অফ করতে সমস্যা নেই।

    বিমানবন্দরের অফিসারেরা বলছেন, একই সময়ে মূল রানওয়ের একটি এবং দ্বিতীয় রানওয়ের একটি দিক বন্ধ থাকলে, সমস্যা হতে পারে। তখন মূল রানওয়ের রাজারহাটের দিক এবং দ্বিতীয় রানওয়ের বিরাটির দিকটা খোলা থাকবে। পাইলটদের দাবি, অবিলম্বে ওই বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলা উচিত। কলকাতা বিমানবন্দরের ডিরেক্টর প্রভাত বেউরিয়া বলছেন, ‘আমরা ওই বেআইনি নির্মাণের কথা জেনেছি। বিষয়টি ডিজিসিএ–কে জানানো হয়েছে। এ বার ডিজিসিএ যে ভাবে বলবে, সেরকম পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে ডেমোলিশনও করা হতে পারে।’

  • Link to this news (এই সময়)