নদিয়ার মুরুটিয়া থানা এলাকায় পুলিশি হেফাজতে শওকত মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ করেন শওকতের পরিবারের লোকজন। ২০২৩ সালের ২৫ অগস্টের সেই মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই নির্দেশ দেওয়ার সময়ে উঠে এল আরজি কর প্রসঙ্গও।
এ দিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণ, এর আগে এই মামলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্য একটি ঘটনায় ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায় সুপ্রিম কোর্টও বহাল রেখেছিল। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর সঙ্গে ওই হাসপাতালেই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনার কথা ভেবে ‘আর্থিক অনিয়ম’ মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। নদিয়ার মুরুটিয়ার শওকত মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনাতেও তাই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় মামলাকারী মঞ্জুরা বিবি শওকতের স্ত্রী। একটি পুরোনো মাদক মামলায় শওকতের দাদা মোহন মণ্ডল এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। যদিও গ্রেপ্তারির জন্য পুলিশ বাড়িতে এলে মোহন এবং তাঁর স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছিল, সেই মামলায় আগেই তাঁরা জামিন পেয়েছিলেন। অভিযোগ, এই কথা শোনার পরে পুলিশ ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। তা না দেওয়ায় মোহনের ভাই শওকত মণ্ডলকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ছিল তাঁর স্ত্রী মঞ্জুরার। ওই দিনেই ভোরে একটি বাঁশ বাগানে উদ্ধার হয়েছিল শওকতের দেহ। সেই সময়ে মঞ্জুরা স্বামীর মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে মামলা করেন।
এ দিকে সেই দিন রাতেই মোহন মণ্ডলের স্ত্রী মাফুজা বিবিকে পুলিশ থানায় তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, একটি খুনের মামলাতে তাঁকে অভিযুক্তও করা হয়। এর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করলে তা মঞ্জুর করে আদালত। শুধু তাই নয়, মাফুজার অভিযোগ ছিল, পুলিশ তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এই মর্মে ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে তিনি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
যেহেতু মাফুজার মামলায় হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তাই স্বামী শওকত মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনাতেও এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মঞ্জুরা। মঙ্গলবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আরজি করে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ও আর্থিক দুর্নীতি, দুটি মামলার তদন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে। তাহলে এ ক্ষেত্রে তা হবে না কেন?