• স্বেচ্ছাশ্রমে অবসরপ্রাপ্ত দুই প্রবীণ প্রধান শিক্ষক
    এই সময় | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, বহরমপুর: স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)–এর চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের সরকারি স্কুলে সুষ্ঠু পঠনপাঠনের স্বার্থে সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে তাঁর সেই অনুরোধ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাখবেন কিনা, তা সময় বলবে।

    গত তিন বছর ধরে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-২ ব্লকের সোমপাড়া গার্লস হাইস্কুলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে চলেছেন অবসরপ্রাপ্ত দু’জন প্রধান শিক্ষক। প্রথম জন বেলডাঙা পশ্চিমচক্রের মহৎপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১২-এ অবসর নেওয়া সাধন কুমার কর্মকার। দ্বিতীয় জন শেখ কামালউদ্দিন। তিনি ২০১৪-এ বেলডাঙা পশ্চিমচক্রের মহম্মদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এতদিন ওই স্কুলে তিনজন স্থায়ী শিক্ষিকা ও পাঁচজন পার্শ্বশিক্ষিকা ছিলেন। কিন্তু নিয়োগ বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তথা ভৌতবিজ্ঞান শিক্ষিকা পায়েল বৈরাগ্য-এর। তিনি স্কুল আসা বন্ধ করেছেন।

    স্কুল সূত্রে খবর, আগে ওই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষিকা ছিলেন ১৬ জন। ২০২১-এ ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় নিজেদের সুবিধের কথা ভেবে বদলি নিয়ে ১৩ জন শিক্ষিকা অন্যত্র চলে যান। ফলে শিক্ষিকা-সঙ্কট দেখা যায়। তখন স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করে স্কুল পরিচালন সমিতি। সেখানে দুই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, স্কুলের স্বার্থে তাঁরা স্বেচ্ছায় নিয়মিত ক্লাস নেবেন। ২০২২ থেকে তাঁরা টানা ক্লাস নিয়ে চলেছেন। সাধন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ইংরেজি পড়ান। কামালাউদ্দিন একই ক্লাসের পড়ুয়াদের বাংলা ছাড়াও অঙ্ক, ভূগোল পড়াচ্ছেন। তাঁরা পরীক্ষায় গার্ড দেন, খাতাও দেখেন।

    স্কুলের শিক্ষিকা লতা ঘোষাল বলেন, ‘এপ্রিলে আরও এক পার্শ্বশিক্ষিকা অবসর নেবেন। স্কুল চালানো মুশকিল হবে।’ প্রসঙ্গত, ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাতশো জন। স্কুলের কাছেই থাকেন ৭২ বছরের সাধন। পায়ে হেঁটে স্কুলে আসেন। মহম্মদপুর গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে আসেন বছর ৭০-এর কামালউদ্দিন। লতার কথায়, ‘সাধন স্যর ও কামালউদ্দিন স্যর সাহায্য করেন বলে সুবিধা হয়। দু’জনেরই বয়স হয়েছে। এই বয়সেও পড়ানোর ব্যাপারে তাঁদের যা উদ্যম, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তাঁরা আছেন বলে স্কুলে চাপ কিছুটা হলেও কমেছে।’

    অবসরপ্রাপ্ত দুই শিক্ষকের কথায়, ‘গ্রামের মেয়েদের পড়াশোনার যাতে ক্ষতি না-হয়, তার জন্য স্কুলে স্বেচ্ছাশ্রম দিই। এর মধ্যে নতুন করে আরও একজন শিক্ষিকা চলে গেলে আমাদের উপরেও কিছুটা চাপ বাড়বে। তবে শিক্ষিকা নিয়োগ করে দ্রুত সমাধান বের করুক সরকার, এটাই আমাদের আশা। আর শিক্ষিত যুব সমাজের কাছে আমাদের আবেদন — যতদিন না এই শিক্ষক-শিক্ষিকা সঙ্কটের পরিস্থিতি কাটছে, তাঁরা স্কুলে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক।’

  • Link to this news (এই সময়)