সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা শেষ হওয়ার পর সদ্য চাকরিহারা এক শিক্ষিকা ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে। নিজের ব্যাগে থাকা খাতার পাতা ছিঁড়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ছোট্ট একটা চিরকুট লিখেছেন। এক – নিরাপত্তারক্ষীর হাতে তুলে দেওয়া ওই চিরকুটে শিক্ষিকা লিখেছেন, ‘দিদি, সত্যিই আপনি ভগবান। আবার প্রমাণ করলেন, রাজ্যের অসহায় মানুষদের বল-ভরসার নাম মমতা ব্যানার্জি।।
অন্তত এদিন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে যে আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন, তাতে তাঁদের আবেগে উদ্বেল হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারাদের মধ্যে যোগ্য । অযোগ্য ইস্যু আছে। কেন তাঁদের এর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি এক গিয়েছে, সেই চর্চার মধ্যেই কিন্তু ৪। মমতা এক চালে বাজিমাত করে দিয়েছেন। এমনিতেই কেবল চাকরিহারাদের পরিবার নয়, এই বিষয়ে রাজ্যের সিংহভাগ মানুষই যথেষ্ট উদ্বেগে আছেন। এই বাজারে একজন সংসারি মানুষের চাকরি যাওয়ার পরিণতি কী হতে পারে, সেটা আমরা সবাই অনুভব করতে পারি।।
মমতার মানবিক মুখ সেটাই ভেবেছে। চাকরি দেওয়ার নামে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ আরও কয়েকজন এই দুর্নীতির মামলায় ফেঁসেছেন। তাদের রক্ষা করতে মা-মাটি-মানুষের সরকার কোনওভাবেই এগিয়ে যায়নি। বরং সিবিআই তদন্তে সহযোগিতা করেছে সরকার। সেটাই কামা। কিন্তু যাঁরা দরদি সেজে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরির প্যানেল বাতিলের জন্য আদালতে আদাজল খেয়ে লড়াই করেছেন, তাঁদের কি মানুষ ক্ষমা করবে। চাকরিহারা এক শিক্ষক তো নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বক্তৃতায় এদিন সেইসব ভেক জনদরদিদের মুখোশ অনেকটাই খুলে দিয়েছেন। মমতা কি সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করেছেন? উঠেছে এই প্রশ্নও।
সেক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর পরিষ্কার কথা, ‘আমায় যদি জেলেও যেতে হয়, আমি প্রস্তুত আছি।’ ভাবা যায়? আজকের দিনে কোনও মুখ্যমন্ত্রী এইরকম একটা স্পর্শকাতর ইস্যূতে বলতে পরেন, আমি জেলে যেতেও প্রস্তুত। এটাই মমতায়, চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। দৃঢ়চেতা জননেত্রীর জনপ্রিয়তার এটাই হল ইউএসপি। আর মমতা মানুষের স্বার্থে একটা জিনিস প্রমাণ করেছেন, তাঁর কাছে কাজের ক্ষেত্রে কোনও দল কিংবা রং নেই। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা যেমন বাম জমনায় কেবলমাত্র লালপার্টির ক্যাডারর পেত, এখন কিন্তু ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে জনমত নির্বিশেষে মানুষ নিজের সমস্যার সমাধান করে। ফের মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করলেন, বিপদে তিনি রাজনীতির রং বিচার করেন না। নিশ্চয়ই সেটা সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অনুভব করছেন। বিপদে রাজাবাসীর ভরসা মমতাই।