• অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ সুপ্রিম কোর্টে, স্বস্তিতে রাজ্য
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে। মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। একে রাজ্য সরকারের আপাত জয় বলেই মনে করা যেতে পারে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদনও নেওয়া হয়। সেই কারণে এই সিদ্ধান্তে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।

    অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে, সেই খবর পান শহিদ মিনারে অবস্থানরত চাকরিহারারাও। সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে এক চাকরিহারা বলেন, ‘সুপারনিউমেরারি পদ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য ছিল না। এটা আদালতের বিচার্য। কিন্তু আমরা এটা দেখলাম যে, যাঁরা দুর্নীতি করেছে, তাঁদের তেমন শাস্তি হল না। অন্য দিকে, আমরা যাঁরা যোগ্য, দুর্নীতি না-করেই চাকরি পেয়েছি, শাস্তি তাদেরই হল।’

    এদিনের সওয়াল-জবাবেও মামলাকারীরা দাবি করেন, বেআইনিভাবে ‘অযোগ্য’দের চাকরি বজায় রাখতে শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল। যদিও সেই দাবি নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আইন বহির্ভূত কিছু হয়নি। এটা স্কুল সার্ভিস কমিশন করতেই পারে। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনক্রমে, তৎকালীন রাজ্যপালের পরামর্শ মেনে শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল। তাই সুপ্রিম কোর্ট এতে হস্তক্ষেপ করছে না।

    শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআই তদন্ত চালানো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানে। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষা দপ্তর বা এসএসসি এই ধরনের পদ সৃষ্টি করতেই পারে। মঙ্গলবার আদালত জানিয়ে দেয়, এই বিষয়ে তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না শীর্ষ আদালত।

    এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের প্রেক্ষিতে কিছু ‘অযোগ্যে’র চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। সেই সময় স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাইকোর্টে এই নিয়ে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘অযোগ্য’দের চাকরি বাঁচাতে ওই শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল।

    এই মামলায় হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তা চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সুপারনিউমেরারি পদ তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। সিবিআই প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।

    হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। সেই মামলার শুনানিতেই মঙ্গলবার সিবিআই তদন্ত নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। এই রায়ের ফলে রাজ্য সরকার ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের উপর থেকে সম্ভাব্য সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের চাপ আপাতত সরল। ওয়াকিবহল মহলের মতে, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এটি রাজ্যের কাছে নিঃসন্দেহে এক বড় স্বস্তি।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)