• রামনবমীতে ইজরায়েলি পতাকা কেন? থানায় অভিযোগ সোমনাথ শ্যামের, পালটা ‘ইতিহাস’ শোনালেন অর্জুন
    প্রতিদিন | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাকপুর: ভাটপাড়ায় রামনবমীর মিছিলে ইজরায়েলের পতাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল আগেই। তা ‘ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতির পরিপন্থী’, ‘ধর্মীয় উসকানির চেষ্টা’ বলে এবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। এনিয়ে পুলিশকে চিঠি লিখে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছেন।তার পরিপ্রেক্ষিতে আবার তাঁকে ভারত-ইজরায়েল বন্ধুত্বের দীর্ঘ ইতিহাস শুনিয়ে দিলেন অর্জুন সিং! তাঁর পালটা প্রশ্ন, কোনও উৎসবে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে এই পতাকা প্রদর্শনে অন্যদের এত সমস্যা হচ্ছে কেন? বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে।

    রবিবার, রামনবমী উপলক্ষে ভাটপাড়ার মিছিল থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। অর্জুন সিংয়ের নেতৃত্বে মিছিলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সঙ্গে দেখা যায় ইজরায়েলের পতাকা। অর্জুনের হাতে ইজরায়েলের পতাকা দেখে সেদিনই জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের মন্তব্য ছিল, “ধর্ম আর রাজনীতি মেলালে চলবে না। যাঁরা এটা করেছে, তাঁরা চায় ধর্মীয় মিছিল, রামের মিছিল নষ্ট করতে। এটা একটা ষড়যন্ত্র।” পালটা সাফাই দিয়ে অর্জুন সিংয়ের দাবি, ”মহরমের মিছিলে এখানে ফিলিস্তিনের (প্যালেস্টাইন) পতাকা বের হয়। তাহলে রামনবমীতে ইজরায়েলের পতাকা নিলে কী দোষ?”

    এই তরজা সেদিনই থামেনি। পরদিন তা ফের উসকে দিলেন তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। সোমবার রাতেই তিনি ভাটপাড়া থানায় এনিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে অভিযোগ, রামনবমীর মিছিলে অর্জুন সিং ইজরায়েলের পতাকা প্রদর্শন করে এলাকায় ধর্মীয় উসকানি ছড়াতে চাইছেন। আর রামনবমীর মিছিলে এধরনের পতাকা বহন ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতির পরিপন্থী। তাই পুলিশের কাছে তাঁর আবেদন, বারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এদিকে, এর পালটা দিতে অর্জুন সিং ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ বন্ধুত্বের কথা মনে করিয়ে দিলেন তৃণমূল বিধায়ককে। তাঁর কথায়, ”উনি ইতিহাসটা ভালো করে জানুন। ভারত সেই কবে থেকে ইজরায়েলের বন্ধু। ব্রিটিশ আমলে ভারত ওদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। সেই বন্ধু দেশের পতাকা নেওয়া কী সমস্যা?”

    অর্জুন যে ইতিহাস বর্ণনা করছেন, তা ঠিকই। তবে তার পুরোটা তিনি বলেননি। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সাল নাগাদ ইজরায়েলে ব্রিটিশ শাসন শেষের পর আরব দুনিয়া যখন ইহুদীদের উপর আক্রমণ করে, সেসময় ইজরায়েল ডেভিড বেন গুরিয়েনের নেতৃত্বাধীন। তিনিই স্বাধীন ইজরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। গুরিয়েনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের নানা দেশই ইহুদীদের মাতৃভূমি রক্ষায় সামরিক, অসামরিক সাহায্য করেছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। অর্জুন সিং নিজের কাজের পক্ষে এই যুক্তিই সাজাচ্ছেন বারবার। তাতে আবার সোমনাথ শ্যামের পালটা দাবি, ”বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে কারও থাকতেই পারে। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কূটনৈতিক বন্ধুত্ব প্রদর্শনের কী দরকার? উনি নিজের বাড়ির ছাদে ইজরায়েলের পতাকা টাঙিয়ে বন্ধুত্ব দেখান না!”
  • Link to this news (প্রতিদিন)