ফরিদাবাদ থেকে বাংলায় সাইবার জালিয়াতির ছক! হরিয়ানায় সিআইডির জালে ৩
প্রতিদিন | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
অর্ণব আইচ: সাইবার জালিয়াতির নতুন ‘হাব’ হরিয়ানার ফরিদাবাদে। ফরিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে বসে সারা দেশে জালিয়াতি করছে সাইবার জালিয়াতরা। এবার রাজ্য পুলিশের সিআইডি পরপর দুই ধরনের সাইবার জালিয়াতির তদন্ত শুরু করার পর অভিমুখ মিলল সেই ফরিদাবাদেই। দু’টি সাইবার জালিয়াতির তদন্তে সাফল্য সিআইডির। এর মধ্যে একটি সাইবার জালিয়াতির শিকার হন হুগলির চন্দননগরের এক বাসিন্দা। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা লগ্নি করার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সাইবার জালিয়াতরা। এছাড়াও অন্য একটি ঘটনায় একটি নামী জুয়েলারি সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার নাম করে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক দফায় ২৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
হুগলির ঘটনাটির অভিযোগের ভিত্তিতে হিমাংশু সোলাঙ্কি ও প্রবীণ কুমার নামে দু’জন সাইবার জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় ঘটনাটিতে গ্রেপ্তার হয় হরিওম সিং। দু’টি ঘটনার তদন্তে ফরিদাবাদ থেকেই তিন সাইবার জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে এলেন সিআইডি আধিকারিকরা। ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া বা রাজস্থানের ভরতপুরের পর ফরিদাবাদে সাইবার জালিয়াতির নতুন ‘হাব’-এর সন্ধান পাওয়ার পর সেদিকে এবার নজর পুলিশের। পুলিশ জানিয়েছে, হুগলির চন্দননগরের এক বাসিন্দার কাছে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আসে। তাঁকে বলা হয়, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করলে কয়েক গুণ টাকা ফেরত পাওয়া যায়। এভাবে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে প্রচুর টাকার লোভ দেখানো হয়।
তিনি টাকা লগ্নি করতে রাজি হয়ে গেলে তাঁকে বলা হয়, টেলিগ্রাম অ্যাপে গিয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দিতে। অভিযোগকারী দেখেন, ওই অ্যাপটিতেও নতুন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এবার ওই নতুন গ্রুপে একই ব্যক্তিরা যোগ দেন। এমনভাবে গ্রুপে দেখানো হয় যে, যাঁরাই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করছেন, তাঁরাই বিপুল টাকা ফেরত পাচ্ছেন। প্রথমে হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা অল্প টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করেন। দেখা যায়, তিনিও টাকা ফেরত পাচ্ছেন। রীতিমতো উৎসাহিত হয়ে তিনি ক্রমে ৪৩ লক্ষ টাকা লগ্নি করেন। বিশেষ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়। হঠাৎই ওই গ্রুপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে মোবাইল নম্বরগুলি ছিল, সেগুলিও দেখা যায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৪৩ লক্ষ টাকা খুইয়ে তিনি চন্দননগর কমিশনারেটের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ মামলা দায়ের করার পর সিআইডির সাইবার থানা এর তদন্ত শুরু করে। সিআইডি আধিকারিকরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তদন্ত করে কিছু ভুয়ো বেসরকারি সংস্থার সন্ধান পান। জালিয়াতির টাকা ওই ভুয়ো সংস্থাগুলির মাধ্যমে ব্যাঙ্কে লেনদেন করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরেও তদন্ত চালিয়ে জানতে পারেন যে, জাল আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছে। এরপর হরিয়ানার ব্যাঙ্কের সিসিটিভির ফুটেজ ও কয়েকটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই সিআইডি ফরিদাবাদেই দুই সাইবার জালিয়াতের সন্ধান পায়। ফরিদাবাদের এসজিএম নগর থেকে হিমাংশু সোলাঙ্কি ও ওই শহরেরই তিলপটের সঞ্জয় কলোনিতে হানা দিয়ে সিআইডি আধিকারিকরা প্রবীণ কুমারকে গ্রেপ্তার করেন। সোমবার দু’জনকে হুগলির আদালতে তোলা হলে তাদের ১২ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক বাসিন্দা একটি নামী গয়না নির্মাতা ও বিক্রেতা সংস্থার ফ্রানচাইজি নেওয়ার জন্য অনলাইনে সার্চ করছিলেন। তখনই ওই জুয়েলারি সংস্থার একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তাঁর সামনে আসে। সিআইডির সূত্র জানিয়েছে, তাঁকে অনলাইনেই একটি ফর্ম ভর্তি করতে বলা হয়। তাঁকে বলা হয়, ‘নিয়ম অনুযায়ী’ তাঁকে প্রথমে ৬ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। তিনি একটি অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা দেওয়ার পর তিনি দোকান খোলার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তাঁকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আরও টাকা জমা দিতে বলা হয়।