মাছের তেলে মাছ ভাজা! হাতি ও গন্ডারের মলে তৈরি ঘাসই পেট ভরাচ্ছে আলিপুর চিড়িয়াখানার তৃণভোজীদের
প্রতিদিন | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
নিরুফা খাতুন: গরুর মল, মানে গোবর। তা দিয়ে তৈরি হয় গোবর সার ও কৃষিকাজে তার প্রয়োগ নতুন কিছু নয়। তাই বলে হাতি ও গন্ডারের মল দিয়ে সার তৈরি! শুনতে অবাক লাগলেও খাস কলকাতার বুকে তেমন কাণ্ডই চলছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার হাতি ও গন্ডারের মল দিয়ে তৈরি ওই জৈব সারে আলিপুর চিড়িয়াখানা চত্বরে ঘাস চাষ হচ্ছে, যা কিনা চিড়িয়াখানার তৃণভোজী আবাসিকদের উদরপূর্তির কাজে লাগছে। অনেকটা মাছের তেলে মাছ ভাজার মতো এ হেন অভিনব উদ্যোগের চিড়িয়াখানার প্রণেতা আলিপুর অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায়।
চিড়িয়াখানায় তৃণভোজী আবাসিকের সংখ্যা কম নয়। তাদের ডায়েটে প্রতি দিন প্রচুর ঘাস লাগে। বাইরে থেকে তা কিনতে কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে মোটা টাকা খসে যায়। উপরন্তু বাইরের ঘাসে রাসায়নিক সারের অবশেষ থাকায় পশুপাখির শরীরের পক্ষেও বিশেষ ভালো নয়। হাতি-গন্ডারের মলের সারে চিড়িয়াখানায় উৎপন্ন এই জৈব ঘাসের দৌলতে দুই সমস্যারই অনেকটা সুরাহা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
আলিপুরে এই মুহূর্তে দুটো হাতি ও একটা গন্ডার রয়েছে। এতদিন তাদের মল পুরসভার জঞ্জালের গাড়িতে ফেলে দেওয়া হত। এখন তা দিয়ে জৈব সার তৈরি হচ্ছে পুরোদমে, যেভাবে গোবর থেকে সার তৈরি হয়, ঠিক সেই পদ্ধতিতে। রোজ সকালে খাঁচা থেকে হাতি ও গন্ডারের মল এক জায়গায় জড়ো করে কিছু দিন রোদে শুকিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ওই মাটিতেই ফলানো হয় ভুট্টা, বাজরা, বরবটির ঘাস। ঘরের তৈরি সেই জৈব ঘাস হরিণ, ক্যাঙারুরা মহানন্দে খাচ্ছে। যদিও আলিপুরের সমস্ত তৃণভোজীর পাতে পর্যাপ্ত জৈব ঘাস জোগানোর মতো উৎপাদন নেই। কারণ, জমির অভাব।
বস্তুত, জমি বাড়ন্ত থাকায় এটুকুও করা মুশকিল ছিল। বিস্তর ভেবেচিন্তে আবাসিকদের খাঁচার পাশে কিংবা অন্যান্য ফাঁকা জায়গায় যতটা সম্ভব ঘাস চাষ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ঘাস চাষের জন্য দুটো নার্সারি করা হয়েছে। একটা গন্ডারের খাঁচার কাছে, অন্যটা ক্যাঙারুর খাঁচার পাশে। অধিকর্তা জানান, হাতি ও গন্ডারের মল একদিকে যেমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে, অন্যদিকে চিড়িয়াখানার তৃণভোজী প্রাণীরা জৈব ঘাস খেতে পাচ্ছে। এটা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভাল। ঘাস চাষ বাড়াতে কিছু ফাঁকা জায়গা চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে।