Ram Navami 2025: রাজ্যে রাম - বান, সম্ভাব্য কারণ ও ফলাফল
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৮ এপ্রিল ২০২৫
রামনবমী পালনের এমন ধূম রাজ্যে যে আগে দেখা যায়নি তা এক কথায় স্বীকার করছেন সবাই। বিজেপি তো বটেই, রামনবমী পালনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন তৃণমূল নেতারাও। গোটা কলকাতা শহর ছেয়ে গিয়েছে গেরুয়া পতাকায়। মোড়ে মোড়ে উঠছে জয় শ্রী রাম ধ্বনী। বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগের বছর রাজ্যে এই রাম – বানের রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজছেন অনেকেই। কেউ বলছেন, আগামী নির্বাচনে রাজ্যে গেরুয়া ঝড় আসতে চলেছেন। অন্য পক্ষের আবার দাবি, সারদা, নারদার মতো গেরুয়া ঝড়ও সামলে নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতির সূত্রপাতের জন্য বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করে আসে বামেরা। তাদের দাবি, মমতার মুসলিম তোষণের জন্যই রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর রামনবমীতে যে রকম উৎসাহ দেখা গিয়েছে তাতে আরও একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের গত কয়েকমাসে যে ভাবে হিন্দুদের ওপর একের পর এক হামলা হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে এপারেও। অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যে তৃণমূলের শাসন থাকলে ফের উদ্ধাস্তু হতে হতে পারে বলে বিজেপি যে প্রচার চালায় তা পুরোপুরি মিথ্যা নয়। তাই চোখের সামনে বাংলাদেশ দেখে পালটা শক্তিপ্রদর্শনে মাঠে নেমেছেন অনেকেই।
এছাড়া অনেকের মতে, সদ্যসমাপ্ত মহাকুম্ভেরও প্রভাব রয়েছে এবার রামনবমীর আড়ম্বরে। রাজ্য থেকে কয়েক কোটি মানুষ কুম্ভে স্নান করতে গিয়েছিলেন। হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে এত মানুষ কখনও বাংলা থেকে কুম্ভে স্নান করতে গিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। এই প্রবণতায় স্পষ্ট বুদ্ধপ্রাণিত বাঙালি হিন্দু ধর্মের কাছে গোবলয়ের হিন্দু ধর্ম আর অচ্ছুৎ নয়। শুধু প্রার্থনা নয়, প্রতিরোধও করতে চায় তারা।
কিন্তু সত্যিই কি রামনবমীর এই আড়ম্বরের প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সে? এই নিয়ে যদিও নানা মুনির নানা মত। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, রামনবমীতে গেরুয়া ঝড়ই বলে দিচ্ছে হিন্দুরা একজোট হচ্ছে। যার ফলে বাড়বে বিজেপির ভোট। যদিও সমীকরণ এতটা সহজ বলে মানতে নারাজ অনেকেই। তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের অংক অত সহজ নয়। বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময় বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া জোরদার হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সামাল দিতে জ্যোতি বসুকে সরিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হয়েছিল বামেদের। সেযাত্রায় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সামলানো গেলেও সিপিএম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
এর থেকেও সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা গিয়েছে ২০১৬ সালে। সেবার বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে রেকর্ড জমায়েত হলেও ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়েনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূল যে অর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছে তা সহজে ভাঙা মুশকিল। কারণ এখানে মানুষের রুটি রুজির সঙ্গে রাজনীতি সরাসরি জড়িত। ফলে আদর্শগতভাবে কেউ বিরোধী কোনও মতকে সমর্থন করলেও অন্নসংস্থানের স্বার্থে ভোট সেই দিতে হয় শাসককেই। তাছাড়া তৃণমূলের সরকার গত ১৪ বছরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে শক্ত পোক্ত একটি ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করেছে। তার ওপর রয়েছে মুসলিম ভোট। ফলে রামনবমীর মিছিলে জনতার ভিড় দেখে বিজেপি নেতারা খুশি হলেও ভোটবাক্স ভরতে তা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।