চরমে পৌঁছল তৃণমূল সংসদীয় দলের অন্দরের কোন্দল। নাম না করে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে বেলাগাম আক্রমণ করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিলে তিনি ইস্তফা দিতেও রাজি আছেন বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন তিনি।
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। তাতে কল্যাণবাবুর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ক্ষিপ্ত হয়ে কারও বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে শোনা যায় তাঁকে। এমনকী একটি ভিডিয়োয় তাঁকে দেখাও যায়। সেই ভিডিয়ো নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন কল্যাণবাবু। আর সেখানে নাম না করে মহুয়া মৈত্রকে তুমুল আক্রমণ করেন তিনি।
কল্যাণবাবু জানান, গত ৪ এপ্রিল ভুয়ো ভোটার নিয়ে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তার আগেরদিন তিনি স্মারকলিপিতে সই করার জন্য দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কয়েকজন সাংসদকে দলের সংসদীয় দফতরে ডেকে পাঠান। ৪ এপ্রিল সকালে তাঁরা একজোট হয়ে স্মারকলিপিতে সই করে নির্বাচন কমিশনে যান। সেই তালিকায় নাম ছিল না তৃণমূলের ওই মহিলা সাংসদের। নির্বাচন কমিশনের দফতরে পৌঁছে তাঁরা দেখেন সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন মহিলা সাংসদ। তিনি কল্যাণবাবুকে প্রশ্ন করেন, কেন তাঁকে দিয়ে স্মারকলিপিতে সই করানো হয়নি। এর পর দুজনের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। তখন সেখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কল্যাণবাবুকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন মহিলা সাংসদ। মহিলা সাংসদের অভিযোগ তাঁকে কটূক্তি করেছেন কল্যাণ। এর পর কমিশনের দফতরে প্রবেশের সময়ও মহুয়ার উদ্দেশে ক্ষোভ ব্যক্ত করতে থাকেন কল্যাণ। সেই ভিডিয়োই প্রকাশ্যে এসেছে।
এদিন কল্যাণ বলেন, ‘সেই মহিলা সাংসদের আর কোনও ইস্যু নেই। শুধু আদানি আর নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির কোনও নেতাকে চ্যালেঞ্জ করেন না তিনি। কোনও মহিলা সাংসদ তো কংগ্রসের কোন বড় নেতার বান্ধবী বলে জেলার রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। আমার মতো একজন লোককে বলছে জেলে ঢোকাও! আর অন্য প্রদেশের এক তৃণমূল সাংসদ এই ভিডিয়ো করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে।
কল্যাণবাবু বলেন, এই ঘটনার আগের দিন কীর্তি আজাদ কয়েকজন মহিলা সাংসদ ও কয়েকজন পুরুষ সাংসদের সই সংগ্রহ করেছিলেন। সেই চিঠিতে লোকসভার স্পিকারকে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের একটা বিখ্যাত সন্দেশের দোকানের কাউন্টার সংসদের ক্যান্টিনে খোলার আবেদন জানানো হয়েছিল। আমি সেই চিঠির বিরোধিতা করি। পার্টির অনুমতি ছাড়া কে দোকান খুলবে এই আবেদন জানানো যায় না। এতেই আমার ওপর ওর রাগ। কে জানে কী কথা হয়ে ছিল।
তিনি বলেন, এই মহিলা সাংসদ আমাকে সংসদের ভিতরে ছোটলোক বলেছে। আমার মেয়ে নিয়ে কথা বলেছে। ওই মহিলা সাংসদের সংসদে বলার জন্য পুরো সময় চাই। কোনও বিতর্কে আমাদের দলের জন্য ২০ মিনিট বরাদ্দ হলে ২০ মিনিটই ওনার চাই। আর কাউকে বলতে দেবে না। উনি সম্প্রতি একটি ছোট বিলে ১৭ মিনিট বলেছিলেন। ওয়াকফ বিলে আমাকে ৩৫ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে বলে ওনার গাত্রদাহ হচ্ছে। আমি তো সাধারণ মানুষের কথা বলি, তুমি এক শিল্পপতির হয়ে আরেক শিল্পপতিকে আক্রমণ করো। যে সাংসদ পিছন থেকে এসবে মদত দিচ্ছেন তিনি অন্য রাজ্য থেকে এসেছেন। এবং তিনি অন্য দল করতেন। সেই দল থেকে তিনি বিতাড়িত হয়ে গিয়েছিলেন।
কল্যাণবাবু প্রশ্ন তোলেন, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বলো, অমিত শাহের বিরুদ্ধে তো কখনও বলো না ভাই। বিজেপির অন্য কোনও নেতার বিরুদ্ধে বলো না। বিজেপির রাজ্যের নেতাদের বিরুদ্ধেও কিছু বলো না।
ক্ষিপ্ত কল্যাণবাবু বলেন, ২ জনের মধ্যে বিবাদ হলে কেউ পুলিশকে বলতে পারে একে গ্রেফতার করো? আমি কোটায় আসা লোক নই। আমি ২০০৯ সালের আগে থেকে রাজনীতি করি। দল যেদিন বলবে, ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। দিদি বললে, এখুনি ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। রাজনীতি করে আমার ভাত - রুটি জোটে না। এই সব অসভ্য মহিলা সাংসদদের সহ্য করব না। উনি ইংরাজিতে ফটর ফটর করতে পারেন বলে কি পুরুষ মানুষকে অপমান করার অধিকার আছে। একটা অভিবেশনে যাব না, বুঝবে ঠ্যালা।