একদিকে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে দলের এক মহিলা সাংসদ, সাংসদ সৌগত রায় ও কীর্তি আজাদ। তৃণমূলের একাধিক সাংসদের বাগযুদ্ধ এ বার প্রকাশ্যে। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘নারদার চোর একটা…টাকা কে নিয়েছে? নারদার চোরগুলো সব এক জায়গায় হয়েছে।’ বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের উদ্দেশে এই তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দেন কল্যাণ। পাল্টা সৌগতের বক্তব্য, ‘কল্যাণের রুচিবোধ কম, সভ্যতা ও শালীনতা কম। নারদার চোর হলে আদালতে প্রমাণ করতে পারেনি কেন?’
যদিও সংঘর্ষের সূত্রপাত নারদা কাণ্ড নিয়ে নয়। গত ৪ এপ্রিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কয়েকজন সাংসদকে ডেকে পাঠানো হয়। সেই তালিকায় নাম ছিল না একজন মহিলা সাংসদের। কমিশনের অফিসে সেই মহিলা সাংসদ কল্যাণের কাছে জানতে চান, ‘কেন তাঁকে ডাকা হয়নি।’ কল্যাণ দলের নির্দেশের কথা উল্লেখ করার পর দু’জনের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়।’
কল্যাণের দাবি, বচসার মাঝেই কমিশনে দাঁড়িয়ে থাকা বিএসএফ জওয়ানকে উদ্দেশ্য করে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বলেন ওই মহিলা সাংসদ। সংবাদমাধ্যমের সামনে কল্যাণ এ দিন বলেন, ‘ওই মহিলা সাংসদ সংসদে শুধু আদানি আর মোদীর বিরুদ্ধে বলেন। আর কারও বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। আমাকে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়।’
কল্যাণ এখানেই থামেননি। সেই মহিলা সাংসদকে উদ্দেশ্য করে কল্যাণের মন্তব্য, ‘এইসব অসভ্য মহিলা সাংসদদের সহ্য করব না। শুধু ইংলিশে ফটর-ফটর করেন বলে পুরুষদের অপমান করার অধিকার কেউ দেয়নি।’
দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও ওই মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে ‘অশালীন’ মন্তব্য করেন কল্যাণ — এমনই কিছু হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট (যা যাচাই করেনি এই সময় অনলাইন) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কল্যাণের এ হেন আচরণের প্রতিবাদ করেন দলের আর এক প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। সৌগতের কথায়, ‘কল্যাণের এই ধরনের মন্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আশা করি দল এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
সাংবাদিক বৈঠক করে এর পর সৌগত রায়ের উপরেও খড়্গহস্ত হন কল্যাণ। কল্যাণ নারদা কাণ্ড টেনে সৌগতের বিরুদ্ধে বলেন, ‘নারদার চোর একটা…সৌগত রায়ের কোনও ক্যারেক্টর রয়েছে নাকি? এখানে এক বলে, ওখানে অন্য কথা বলে। ওঁর চরিত্র হচ্ছে একবার এর পিছনে লাগা, এক বার অন্যের পিছনে লাগা।’
দুই প্রবীণ সাংসদ ও এক মহিলা সাংসদের বিতণ্ডার মধ্যে জড়িয়ে পড়েন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে জিতে আসা দলের সাংসদ কীর্তি আজাদও। কল্যাণের দাবি, চিত্তরঞ্জন পার্কের একটি মিষ্টির দোকানের কাউন্টার সংসদে খোলার জন্য কীর্তি স্পিপারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এর জবাবে কল্যাণ বলেন, ‘তৃণমূল বেসরকারি কোনও ব্যবসায় আগ্রহী নয়।’ কীর্তির এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন কল্যাণ। সেই আক্রোশেই নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনের তাঁর ও মহিলা সাংসদের বচসার ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে কল্যাণ। যদিও কল্যাণের এই বক্তব্যের পর কীর্তি আজাদের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এহেন দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসায় দলের কয়েকজন সাংসদ বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও পদক্ষেপ করে কি না সেটাই এখন দেখার।