এই সময়, মেদিনীপুর: স্কুলে থাকতে আর ভালো লাগছে না রোহনের। ক্লাসে চুপ করে বসে থাকছে। খেলাধুলাও করছে না সে। কেশিয়াড়ির সুন্দরাড় হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রোহন। ছেলের অবস্থা দেখে চিন্তায় পরিবারের লোকজন। রোহনের মা সুলতা রানা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাবা দয়ারাম রানা চাষবাস করেন। সুলতা বলেন, ‘তিনদিন হলো ছেলের খুব মন খারাপ। স্কুলের অঙ্কের স্যর আর স্কুলে আসছেন না। আমরা সকলে বোঝাচ্ছি। কিন্তু ছেলে মনমরা হয়ে বসে আছে।’
সোমবার নেতাজী ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের খবর আছে রোহনের কাছে। সোমবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে মা''কে জিজ্ঞেস করছে, ''মা শুনলাম, স্যারেররা আবার নাকি স্কুলে আসবে?'' বৃহস্পতিবার সুপ্রিম–নির্দেশে স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক সুতপ মান্নার চাকরি বাতিল হয়েছে। শুক্রবার থেকে তিনি আর স্কুলে আসছেন না। রোহনের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন অঙ্কের শিক্ষককে খুব ভালোবাসত সে। কোনও অঙ্ক বুঝতে না পারনেই তাঁর কাছে চলে যেত রোহন। শুধু রোহনই নয় স্কুলের অন্য পড়ুয়াদেরও মন খারাপ অঙ্কের স্যরের জন্য। তারাও পড়ায় মন বসাতে পারছে না বলে জানিয়েছেন স্কুলের অন্য শিক্ষকরা। স্কুলে যেতে পারছেন না বলে মন খারাপ শিক্ষকেরও।
তিনি বলেন, ‘ স্কুলের খুব গরিব ঘরের ছাত্ররা পড়াশোনা করে। সে কারণে শিক্ষকদের উপরে ওরা বেশি ভরসা করে। পড়ায় সমস্যা হলে সমাধানে পরাপর্শ দিতাম। ওদের সঙ্গে সহজেই মিশে গিয়েছিলাম। এ ভাবে স্কুল ছেড়ে আসতে আমারও খারাপ লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে রায়ের পরে কাঁদতে কাঁদতে স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। তারপর থেকে আর স্কুলে যায়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফোন করেছিলেন, স্কুলে আসার জন্য। কিন্তু মন ভালো নেই। দেখতে চাইছি ৭ তারিখ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী যোগ্যদের জন্য কী করেন। তারপরেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবো।’ সোমবার নেতাজী ইন্ডোরেও যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুন্দরাড় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরমেশ্বর প্রামাণিক বলেন, ‘ সুতপ মান্না ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক। তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সহজে মিশে যেতেন। খুব সমস্যার পড়ে গেলাম।’ প্রায় সাড়ে সাতশো ছাত্রছাত্রী রয়েছে স্কুলে। আগে পাঁচজন শিক্ষক বদলি হয়ে গিয়েছেন। মোট ১৯ জন শিক্ষক–শিক্ষিকার মধ্য এখন মাত্র ১৫ জন রয়েছেন। চার জন শিক্ষক চাকরিহারা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অধিকাংশই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। এ ছাড়াও দুই শিক্ষাকর্মীরও চাকরিহারা হয়েছেন। কী ভাবে স্কুল চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। ...