চাকরি অবৈধ অথচ খাতা দেখা বৈধ! প্রশ্ন চাকরিহারা শিক্ষকের
আজকাল | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যেদিন চাকরি গেল, সেদিনও উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখেছেন। তার পরেও খাতা দেখেছেন। মঙ্গলবার সেই খাতা হেড এক্সামিনারের কাছে জমা দিতে গেলেন চন্দ্রহাটি দিলীপ হাইস্কুলের একাদশ–দ্বাদশের পলিটিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষক অমিত মণ্ডল। হুগলি কানাগড় এলাকায় তাঁর বাড়ি। ২০১৮ সালে চাকরি পেয়ে যোগ দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে। সেখানে আড়াই বছর চাকরি করে উৎসশ্রী নিয়ে চন্দ্রহাটিতে চলে আসেন।
বাবা অমর মণ্ডল রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। খুব কষ্ট করে তিনি বড় করেছেন ছেলেকে। শিক্ষক হওয়ার পর ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে টালির চালের বাড়িটা পাকা করেছেন অমিত। গত ২০২২ সালে অমর বাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা করানোর জন্য ব্যক্তিগত ঋণও নিয়েছেন অমিত। শিক্ষক হিসাবে বেতন ভালই পেতেন। তাই চিন্তা ছিল না। বর্তমানে বাড়ি এবং ব্যক্তিগত মিলিয়ে ২৭ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে তাঁর। মাসে ৩৫ হাজার টাকা ঋণের ইএমআই। কি করে শোধ হবে! সেই ভাবনা আর ভাবতে পারছেন না। অমিত বলেছেন, ‘সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। আমি কাল থেকে স্কুলে যাবো। আজ উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা জমা দিতে যাব তাই স্কুলে যাইনি। এখন যে স্কুলে যাব তার পারিশ্রমিক কি হবে জানি না। তবে আমার ঋণ আছে। বাড়িতে ডালভাত খেতেও তো কিছু টাকা লাগবে। আশা নিয়ে আছি মুখ্যমন্ত্রী কিছু সুরাহা করবেন। আমরা যারা যোগ্য তাদের চাকরি চলে গেল অথচ এর জন্য আমরা দোষী নই। বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে। আমার চাকরি অবৈধ অথচ আমি উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখলাম সেটা বৈধ! অপরাধ করলো চার হাজার। আর তার সাজা পাচ্ছে কুড়ি হাজার। এ কেমন বিচার। এটা বিচারবিভাগের দ্বিচারিতা। আমি চুরি করিনি, আমাকে চোর প্রমাণ করা যাবে না। আমার মতো এরকম অনেকেই আছেন, যারা চুরি না করে চোর। এভাবে কি সন্দেহের বসে চাকরি বাতিল করা যায়। আমার বেঁচে থাকার নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। এটা কি আর্টিকেল ২১ ভায়োলেট করা হল না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভরসা ছিল আদালত। আস্থা ছিল বিচারব্যবস্থার প্রতি। এই রায়ের পর এবার আমরা কোথায় যাবো। তবু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পর কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে।’ বুধবার আবার স্কুলে যোগ দেবেন তিনি।