জীবনের ঝুঁকি নিয়েই জঙ্গলে প্রবেশ করলেন মৌলেরা, শুরু মধু সংগ্রহের কাজ...
আজকাল | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুরু হল মধু সংগ্রহের কাজ। আজ থেকে রায়দিঘী রেঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে মধু সংগ্রহের সূচনা হল। পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তর জানিয়েছে, এবছর মোট ৫৫টি দলকে মধু সংগ্রহের জন্য পারমিট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলে সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে সাত জনের মধ্যে। প্রথম পর্যায়ে ১৫ দিনের অনুমতি নিয়ে তারা জঙ্গলে প্রবেশ করবেন।
মধু সংগ্রহ মৌলেদের অন্যতম প্রধান জীবিকা হলেও এই কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাঘের আক্রমণ কিংবা জঙ্গলের অন্যান্য বিপদের কথা মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে বনদপ্তর। মৌলেদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জঙ্গলের কোন কোন অংশে তারা যেতে পারবেন এবং কোন অংশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জঙ্গলে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য বনদপ্তরের পেট্রোলিং চলবে নিয়মিত। পাশাপাশি মৈপীঠ উপকূল থানার পুলিশের তরফ থেকেও নজরদারি চালানো হবে।
সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ারের ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক বলেছেন, "জীবনের দাম সবকিছুর থেকে অনেক বেশি। তাই মৌলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম কাজ।" সমস্ত মৌলেদের ফোন নম্বর বনদপ্তরের কাছে রাখা হয়েছে এবং বনদপ্তরের জরুরি নম্বর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কারও কোনও সমস্যা হলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন তারা। নিরাপত্তার পাশাপাশি মৌলেদের জন্য বিমার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বিমার মেয়াদ এক বছর। কেউ আহত হলে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং কারও মৃত্যু হলে পরিবার পাবে ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও মৌলেদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে মুখোশ, গ্লাভস, ফাস্ট অ্যাড বক্স, ড্রাম। প্রতিটি দলের কাছে থাকা রেডিওর মাধ্যমে তারা আবহাওয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপডেট পেয়ে যাবেন।
এবার মধুর দামও বাড়ানো হয়েছে। গতবারের তুলনায় কেজি প্রতি ৫ টাকা করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বনদপ্তর মনে করছে, এতে মৌলেরা কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। এবারের লক্ষ্য ১০ টন মধু সংগ্রহ।
মধু সংগ্রহকে কেন্দ্র করে এলাকার পরিবারগুলিতে দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে। মৌলেরা চিতুরী বীট অফিসে বনবিবির পুজো দিয়ে জঙ্গলে রওনা হন। পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনের সুস্থভাবে ফিরে আসার প্রার্থনা করেন। এই সময় বাড়িতে রান্না বন্ধ থাকে, স্ত্রী ও পরিবার সদস্যরা প্রায় বিধবার মত জীবন যাপন করেন। তবুও জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সুন্দরবনের এই প্রাচীন পেশাকে ধরে রেখেছেন এখানকার মানুষ।