তৃণমূলের সংসদীয় দলে কোন্দল। দলের এক মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সরাসরি আক্রমণ করলেন বর্ষীয়ান সংসদ সৌগত রায়ের বিরুদ্ধেও। ঘটনায় কল্যাণের বিরুদ্ধে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগ করেছেন সৌগত রায়। তিনি দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কল্যাণকে দল থেকে বহিষ্কারেরও দাবি তুলেছেন।
তৃণমূলের ওই মহিলা সাংসদ মহুয়াকে নিয়ে এই গন্ডগোলের সূত্রপাত। তাঁর বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্য করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সংবাদ শিরোনামে। তাঁর আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কল্যাণ দল থেকে ইস্তফা দিতেও রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিলে তিনি দল থেকে ইস্তফা দিতেও রাজি আছেন।
কিন্তু কী নিয়ে এই অশান্তি? সূত্রের খবর, গত ৪ এপ্রিল ভুয়ো ভোটার নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। কিন্তু, স্মারকলিপি জমা দেওয়ার আগের দিন তাতে সই করার জন্য তৃণমূলের সংসদীয় দপ্তরে নির্দিষ্ট কয়েকজন সাংসদকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই তালিকায় নাম ছিল না তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। কিন্তু জমা দেওয়ার দিন দেখা যায়, আগে থেকেই নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে দাঁড়িয়ে আছেন মহুয়া মৈত্র। সেখানে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি প্রশ্ন করেন, কেন তাঁকে স্মারকলিপিতে সই করানো হয়নি? এরপরই দুজনের মধ্যে তীব্র বাগযুদ্ধ শুরু হয়। মহুয়া তখন কটূক্তি করার অভিযোগে সেখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নির্দেশ দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারের জন্য।
এদিকে দু’জনের বচসার পর নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে প্রবেশের সময় কল্যাণ মহুয়াকে বেলাগাম আক্রমণ করেন। সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এব্যাপারে মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। তাতে কল্যাণ বাবুর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। সেই ভিডিওতে কল্যাণ বাবুকে সশরীরে দেখা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে তাঁর কণ্ঠস্বরও। বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। এরপরই কল্যাণবাবু একটি সাংবাদিক বৈঠকে নাম না করে মহুয়াকে বেলাগাম আক্রমণ করেন।
সাংবাদিক বৈঠকে কল্যাণ বলেন, ‘সেই মহিলা সাংসদের আর কোনও ইস্যু নেই। শুধু আদানি আর নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির কোনও নেতাকে চ্যালেঞ্জ করেন না তিনি। কোনও মহিলা সাংসদ তো কংগ্রসের কোনও বড় নেতার বান্ধবী বলে জেলার রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। আমার মতো একজন লোককে বলছে জেলে ঢোকাও! আর অন্য প্রদেশের এক তৃণমূল সাংসদ এই ভিডিও করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে।’
কল্যাণবাবু বলেন, ‘এই ঘটনার আগের দিন কীর্তি আজাদ কয়েকজন মহিলা সাংসদ ও কয়েকজন পুরুষ সাংসদের সই সংগ্রহ করেছিলেন। সেই চিঠিতে লোকসভার স্পিকারকে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের একটা বিখ্যাত সন্দেশের দোকানের কাউন্টার সংসদের ক্যান্টিনে খোলার আবেদন জানানো হয়েছিল। আমি সেই চিঠির বিরোধিতা করি। পার্টির অনুমতি ছাড়া কে দোকান খুলবে এই আবেদন জানানো যায় না। এতেই আমার ওপর ওর রাগ। কে জানে কী কথা হয়েছিল।’
কল্যাণ ওই মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে সংসদে দলের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলার সময় এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ নিয়েও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘এই মহিলা সাংসদ আমাকে সংসদের ভিতরে ছোটলোক বলেছে। আমার মেয়ে নিয়ে কথা বলেছে। ওই মহিলা সাংসদের সংসদে বলার জন্য পুরো সময় চাই। কোনও বিতর্কে আমাদের দলের জন্য ২০ মিনিট বরাদ্দ হলে ২০ মিনিটই ওনার চাই। আর কাউকে বলতে দেবে না। উনি সম্প্রতি একটি ছোট বিলে ১৭ মিনিট বলেছিলেন। ওয়াকফ বিলে আমাকে ৩৫ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে বলে ওনার গাত্রদাহ হচ্ছে। আমি তো সাধারণ মানুষের কথা বলি, তুমি এক শিল্পপতির হয়ে আরেক শিল্পপতিকে আক্রমণ করো। যে সাংসদ পিছন থেকে এসবে মদত দিচ্ছেন তিনি অন্য রাজ্য থেকে এসেছেন। তিনি অন্য দল করতেন। সেই দল থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন।’
কল্যাণবাবুর আরও প্রশ্ন, ‘নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বলো, অমিত শাহের বিরুদ্ধে তো কখনও বলো না ভাই। বিজেপির অন্য কোনও নেতার বিরুদ্ধে বলো না। বিজেপির রাজ্যের নেতাদের বিরুদ্ধেও কিছু বলো না।’