মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও কর্মে অবিচল তিনি। স্কুলের পড়ুয়াদের পাঠদান করা তাঁর অন্যতম কাজ। সেজন্য তিনি স্কুলে প্রতিদিন আসবেন। বেতন পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বেতন নিয়ে কিছু ভাবছেন না শ্যামপুর হাই স্কুলের হিসাবশাস্ত্রের শিক্ষক সুশান্ত দত্ত নিয়োগী।
স্কুলে থাকাকালীনই সুপ্রিম কোর্টের রায় জানতে পেরেছিলেন তিনি। কর্তব্যে অবিচল ওই শিক্ষক তারপরও পরীক্ষায় গার্ড দিয়েছেন। এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখছেন তিনি। মধ্যে একদিন উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা জমা দেওয়ার জন্য তিনি স্কুলে যেতে পারেননি। মঙ্গলবার আবার তিনি স্কুলে গিয়েছেন। বেতন না পেলেও যতদিন তাঁর নিজের অর্থ ব্যয়ের মতো সামর্থ থাকবে, সেই অর্থ ব্যয় করেই তিনি স্কুলে যাবেন। কোনওভাবেই পড়ুয়াদের তিনি বঞ্চিত করবেন না। শ্যামপুর হাই স্কুলের হিসাবশাস্ত্রের শিক্ষক সুশান্ত দত্ত নিয়োগী এমনটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজ মঙ্গলবার পরীক্ষায় গার্ডও দিয়েছেন।
গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসির প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। সে বছরই পরীক্ষায় পাশ করে ওই স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন সুশান্ত দত্ত নিয়োগী। স্কুলে হিসাবশাস্ত্র পড়ানোর জন্য তাঁর যথেষ্ঠ প্রশংসাও আছে। তাঁর চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুলের সহকর্মীরাও হতাশ। এই খবর ছড়িয়েছে স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যেও। স্যর কি আর স্কুলে আসবেন না? সেই প্রশ্ন উঠেছিল ছাত্রদের মনেও। তবে তিনি সকলকেই জানিয়ে দেয়, চাকরি গেলেও তিনি স্কুল ছাড়ছেন না। নিয়মমতোই তিনি পড়াতে আসবেন।
সুশান্তবাবু বলেন, “যতদিন আমার যাতায়াতের খরচের সামর্থ্য থাকবে ততদিন আমি স্কুলে যাব। কোনওভাবেই আমি ছাত্রদের আমি বঞ্চিত করতে পারব না।” তিনি আরও বলেন, “আমি ২০১৬ সালের কমার্সের বিভাগে সার্ভিস কমিশনের তালিকায় তৃতীয় ছিলাম।” ওই স্কুলে কমার্স বিভাগে মাত্র দুজন শিক্ষক। সুশান্তবাবু ছাড়া আর একজন পার্ট টাইমার রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই সুশান্তবাবুর কাঁধেই ছিল বিভাগের যাবতীয় দায়িত্ব। সুশান্তবাবু স্কুলে না গেলে সমস্যা বাড়বে। এই অবস্থায় ছাত্রদেরকে তিনি বঞ্চিত করে অন্ধকারে ফেলতে রাজি নন। দায়িত্ববোধ থেকেই সুশান্তবাবু বিনা বেতনে আপাতত চাকরি করবেন। প্রসঙ্গত সুশান্তর বাড়ি উলুবেড়িয়া ফুলেশ্বর এলাকায়। যাতায়াতে তাঁর কমপক্ষে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ রয়েছে। তা সত্ত্বেও নিজের টাকা খরচা করেই তিনি স্কুলে যাবেন। তার এই দায়িত্ববোধকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস। তিনি বলেন খুবই ভালো সিদ্ধান্ত, প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে খুশির স্কুলের পড়ুয়ারাও।