চাহিদা না থাকলেও ফি বছর জাবেদা খাতা নিয়ে শহরে আসেন বিহারের মহঃ আবির
বর্তমান | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ডিজিটাল লেনদেনে দোকানে জাবেদা খাতার চাহিদা তলানিতে। তবুও বিক্রির আশায় ফি বছর বিহার থেকে ওই খাতা নিয়ে জলপাইগুড়ি শহরে আসেন মহম্মদ আবির হোসেন। সারাবছর কোনও যোগাযোগ না থাকলেও, নিয়ম করে রামনবমীর আগে লাল কাপড়ে মোড়া ওই খাতার বান্ডিল নিয়ে শহরের দিনবাজারে হাজির হয়ে যান তিনি। এবারও তার অন্যথা হয়নি। তবে এ বছর বাংলা নববর্ষে জলপাইগুড়িতে জাবেদা খাতার একেবারেই চাহিদা না থাকায় হতাশ দ্বারভাঙার বাসিন্দা পঁয়ষট্টি বছরের ওই বৃদ্ধ।
শহরের মার্চেন্ট রোডে একফালি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন জাবেদা খাতা। কিন্তু দোকান ফাঁকা। চৈত্রের দুপরে প্লাস্টিকের ভাঙা টুলে শুকনো মুখে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থেকেই কার্যত দিন কাটছে তাঁর। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, বেলা ১টা বেজে গেলেও একটা খাতা বিক্রি হয়নি। প্রতিবারই ভাবি, আর আসব না। কিন্তু গত ৪১ বছর ধরে আসছি তো! প্রথমবার এসেছিলাম বাবার হাত ধরে। পয়লা বৈশাখের আগে জলপাইগুড়িতে না আসার কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়। তবে এবার যা হাল, তাতে আগামী বছর থেকে আর হয়তো আসব না।
ক্রেতার দেখা না মিললেও ভাড়া নেওয়া ছোট্ট দোকানে নিজের মনে জাবেদা খাতা বানিয়ে চলেন আবির হোসেন। বললেন, এটাই আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমরা ছয় ভাই, দুই বোন। এরমধ্যে তিনভাই জাবেদা খাতা বানিয়ে বিক্রি করি। বাবা জাবেদা খাতা নিয়ে জলপাইগুড়িতে আসত। তার সঙ্গেই আমরা ভাইরা আসতাম। কিন্তু এখানে ব্যবসার সুদিন না থাকায় অন্য দুই ভাই এখন বিহারেই খাতা তৈরি করে বিক্রি করে। আমি অবশ্য তিস্তাপাড়ের এই শহরের টান ফেরাতে পারিনি।
৩০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচশো টাকার খাতা রয়েছে তাঁর কাছে। তবে ভালো জাবেদা খাতার দাম ২৫০-৪০০ টাকা। খাতার উপর লক্ষ্মী-গণেশের ছবি। বছরে তাঁর মাস দেড়েকের ঠিকানা হয়ে ওঠে জলপাইগুড়ি শহর। সারাদিন দোকান চালিয়ে রাত কাটান দিনবাজারে একটি ধর্মশালায়। এজন্য দিনে ৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
আবির হোসেনের কথায়, ছেলে বিহারে এসি মেকানিকের কাজ করে। ভাইপোও অন্য কাজ করে। ওরা কেউই জাবেদা খাতা তৈরির ব্যবসায় আসতে চাইছে না। বৃদ্ধ বয়সে আমি আর অন্য কী করব! তাই বাবা-ঠাকুরদা যা শিখিয়ে গিয়েছে, তা দিয়েই রোজগারের চেষ্টা করছি। তবে এতে আর পেট চলার নয়।