সালানপুরে অপহৃত ব্যবসায়ী উদ্ধার, ধরা পড়ল অভিযুক্তরা
বর্তমান | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ব্যবসায়ী অপহরণ-কাণ্ডে মঙ্গলবার তেতে উঠল পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর। অপহরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণ-ফোনের সূত্র ধরে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে পুলিস। ধরা পড়ে অপহরণকারীরাও। তাদের নিয়ে পুলিস সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে ঢুকতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মানুষজন জড়ো হয়ে অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যে গাড়িতে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়িটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিসের কড়া অবস্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন, সকালে গোরু ব্যবসায়ী শামসুল আনাসারি কালিপাথরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম যাচ্ছিলেন। পথেই একদল দুষ্কৃতী তাঁকে অপহরণ করে। কয়েক ঘন্টার পর ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। পুলিসকে জানালে খুনের হুমকিও দেয় দুষ্কৃতীরা। সেই হুমকি উপেক্ষা ব্যবসায়ীর পরিবার ঘটনাটি পুলিসকে জানায়। সঙ্গে সঙ্গেই অপহরণ কাণ্ডের কিনারা করতে নেমে পড়ে তারা। ওই ফোনের সূত্র ধরেই দুপুরের মধ্যেই জামুড়িয়া থানার চুরুলিয়া এলাকা থেকে অপহরণকারীদের ধরা হয়। উদ্ধার করা হয় ব্যবসায়ীকে। ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, ‘চারজন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা গিয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
অপহৃত ব্যবসায়ীর জীবন বাঁচাতে রীতিমতো কৌশল করেই এগতে হয় পুলিসকে। পরিবারকে বলে দেওয়া হয়, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মার্জিত কথা বলতে। কোনওভাবেই কথা কাটাকাটিতে জড়ানো চলবে না। মুক্তিপণ দেওয়া নিয়ে নরম সুরে দর কষাকষি করা যেতে পারে। পুলিসের এই নির্দেশ মেনে অপহরণকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যান আনসারির পরিবার। প্রথমে অপহরণকারীরা ৫ লক্ষ টাকায় ব্যবসায়ীকে মুক্তি দিতে রাজি হয়। পরিবারের তরফে তাদের কাছে আকুতি-মিনতি করে টাকার অঙ্ক কমাতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে মুক্তি পাবেন ব্যবসায়ী। এই কথোপকথনের মাধ্যমে পুলিস নিশ্চিত হয়ে যায়, অপহরণকারীরা জামুড়িয়া থানা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীর অবস্থানও জেনে যান তদন্তকারীরা। তিনি গাড়ির ভেতরেই রয়েছেন অপহরণকারীদের সঙ্গে। তাই টাওয়ার লোকেশনের অবস্থান বদল হচ্ছে। সালানপুর থানার পুলিস পুরো বিষয়টি জামুড়িয়া থানায় জানায়। জামুড়িয়া থানার পুলিস ও সালানপুর থানার পুলিস যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে নিশ্চিত হয় অপরহণকারীরা রয়েছে চুরুলিয়ার বীরকুল্টি শ্মশানঘাট এলাকায়। নিখুঁত অবস্থান জেনেই চূড়ান্ত অভিযান। মুহূর্তেই ঘিরে ফেলা হয় পুরো এলাকা। পুলিসের অনুমান সঠিকই ছিল। দেখা যায় গাড়িতেই বসে ব্যবসায়ী ও দুষ্কৃতীরা। পুলিসকে দেখে ব্যবসায়ীকে গাড়িতে ফেলে অপহরণকারীরা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই পুলিস ধরে ফেলে চারজন দুষ্কৃতীকে। অপহৃত ব্যবসায়ী জানান, গাড়িতে চার পাঁচ জন থাকলেও আশেপাশে আরও দু’ থেকে তিন জন ছিল।
এদিকে, ব্যবসায়ী অপহরণ কাণ্ডের খবরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সালানপুর থানা এলাকায়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের মিহিজামে একটি অপহরণকারী দল তৈরি হয়েছে। তারা মাঝে মধ্যেই ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে। তাই অভিযুক্তরা পুলিস ফাঁড়িতে ঢুকতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। তাঁরা পুলিসের হাত থেকে দুষ্কৃতীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাতে ব্যর্থ হলে অপহরণকারীদের গাড়িতে চড়াও হয়ে দেদার ভাঙচুর করে। তৃণমূল ব্লক সম্পাদক ভোলা সিং বলেন, ‘পুলিস প্রশংসনীয় কাজ করেছে।’