• কমছে না শিশুমৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠিত
    বর্তমান | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ফের সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় এসএনসিইউতে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসার গাফিলতিকেই কাঠগড়ায় তুললেন পরিজনরা। মুমূর্ষু শিশুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা কেন হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসায় গাফিলতিই যে মৃত্যুর অন্যতম কারণ তা স্বীকার করছেন খোদ সুপারও। তিনি পুরো ঘটনার তদন্ত করতে বোর্ড গঠন করতে চলেছেন। ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। 

    কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার বিপ্লব মণ্ডল বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে চিকিৎসার গাফিলতি ছিল। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি বোর্ড গঠন করে। মৃত শিশুর দেহ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

    রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার ঠেকাতে সরকার বহু মহকুমা হাসপাতালে গড়েছেন এসএনসিইউ। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে সেই পরিকাঠামো সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না শিশুমৃত্যুর হার। গত তিন মাসে এসএনসিইউতে প্রায় ৪-৫টি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে পরিজনদের পক্ষ থেকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহরের পানুহাট পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা কেয়া চক্রবর্তী শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে গত শুক্রবার পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সে সময় সদ্যোজাত শিশুর ওজন ছিল ১ কেজি ৮০০ গ্রাম। এরপর রবিবার শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তারপরেই কেয়াদেবী ও তাঁর স্বামী অনয় চৌধুরী সদ্যোজাতকে নিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিউতে ভর্তি করেন। কেয়াদেবীর অভিযোগ, প্রথম দিকে শিশুটি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু রবিবার রাত থেকে তার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাকে সেটা দেওয়াও হয়। কিন্তু তারপর থেকে শিশুর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক সে সময় ভালো করে চিকিৎসা করেননি। উল্টে ক্রমাগত ওই চিকিৎসক আমাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। সময়মতো চিকিৎসা হলে আমার প্রথম সন্তানকে সুস্থ করে বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম। 

    সুপার জানান, ওই শিশুর ওই সময় যে ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল, তা আমাদের হাসপাতালে নেই। তাকে তড়িঘড়ি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হতো। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা কেন করা হল না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। শিশুটির বাবা হাসপাতালের সুপারের কাছে এবং থানাতে ওই চিকিৎসকের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

    কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও দাঁইহাটের বেরা এলাকার এক দম্পতির শিশু মারা যায়। চর বিকিহাটের বাসিন্দা অনন্ত গাইন পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তাঁর অভিযোগ ছিল, হাসপাতালে তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করার পর থেকে কোনও চিকিৎসক দেখেননি। তারপর রাতে একজন চিকিৎসক এসে শুধু একটি ইঞ্জেকশন ও ওষুধ দিয়ে যান। সারারাত প্রসব বেদনায় কাতারাতে থাকেন ওই প্রসূতি। তখনও নাকি কোনও চিকিৎসক দেখেননি। শেষে শিশু জন্মালেও তা মারা যায়। 

    কেন বার বার হাসপাতালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি তুলেছেন সদ্য সন্তানহারা বাবা ও মা। 
  • Link to this news (বর্তমান)