‘স্বেচ্ছাশ্রমে’ নারাজ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা, মানছেন না মমতার পরামর্শ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারাদের স্বেচ্ছাশ্রমের কথা বলেছিলেন। পরামর্শ দিয়েছিলেন আপাতত স্কুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ কেউ তাঁর সেই পরামর্শ মানলেও চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকাংশই তা মানছেন না। মনখারাপ নিয়ে কেউ কেউ মঙ্গলবার স্কুলে গিয়েছেন। কেউ আবার কিছুক্ষণ স্কুলে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মানলেন না চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি বড় অংশ। মঙ্গলবার জেলায় জেলায় এমনই টুকরো টুকরো চিত্র ধরা পড়েছে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত চিত্র ধরা পড়েছে। যেমন পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন এলাকার স্কুলে যোগাযোগ করে জানা যায়, এখানকার চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কেউই স্কুলে যাননি। আবার পশ্চিম মেদিনীপুরেও একই চিত্র ধরা পড়েছে। সেখানে স্কুলে যাননি চাকরিহারাদের কেউই। বরং তাঁদের একাংশ জেলা শাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মেদিনীপুর শহরে কলেজ মাঠে জমায়েতের পর মিছিল করে জেলা কালেক্টরেট মোড় পর্যন্ত যান তাঁরা। সেখানে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধও করেন। তাঁদের দাবি, ‘স্বেচ্ছাশ্রম’ নয়, তাঁরা যাতে চাকরি করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হোক।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের চিত্রও প্রায় একইরকম। এখানকার নিমিকি হাই স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে গেলেও কোনও ক্লাস নেননি। তাঁরা ঘন্টাখানেক স্কুলে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।
শিলিগুড়ির অনামিকা রায় শেষ পর্যন্ত চাকরি পেয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর পরিবর্তে। এবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁরও চাকরি হারিয়েছে! মঙ্গলবার দ্বিতীয়ার্ধে স্কুলে গিয়েছেন সেই অনামিকা। স্কুলে গিয়েছেন তাঁর মতো আরও কয়েকজন চাকরিহারা। এই স্কুলে এখন পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার হলে ‘গার্ড’ দেন অনামিকা। এছাড়া দার্জিলিং জেলার সমতল এলাকার অন্য স্কুলগুলিতে বেশির ভাগ চাকরিহারাই এখনও কাজে যোগ দেননি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার স্কুলগুলিতেও মঙ্গলবার চাকরিহারা শিক্ষকদের উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে।
অন্যদিকে দার্জিলিং জেলার সমতল এলাকার অন্য স্কুলগুলিতে বেশির ভাগ চাকরিহারাই এখনও কাজে যোগ দেননি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও মঙ্গলবার স্কুলগুলিতে চাকরিহারা শিক্ষকদের উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। জেলার স্কুল পরিদর্শন (মাধ্যমিক) দেবাশিস সমাদ্দার জানান, দিনভর অনেক প্রধানশিক্ষক তাঁকে ফোন করেছেন। চাকরিহারা শিক্ষকদের কেউ কেউ স্কুলে ফিরে খাতায় সই করতে চেয়েছেন। যদিও জেলা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে খবর, চাকরিহারাদের অধিকাংশই মঙ্গলবার কাজে যোগ দেননি। এর একটি অন্যতম কারণ হতে পারে চাকরিহারাদের একটি বড় অংশ সোমবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরের সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির ক্ষেত্রে চাকরিহারাদের স্কুলে উপস্থিতির হার মঙ্গলবার পুরোপুরি স্পষ্ট না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
অনুপস্থিত বীরভূম জেলার চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এখানকার নানুর ব্লকের নানুর টিকেএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষিকা ও এক জন গ্রুপ সি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। স্কুলে মোট ১২ জন শিক্ষিকা ছিলেন। আপাতত আট জন আছেন। তাঁরা কোনও রকমে পঠনপাঠন চালিয়ে যাচ্ছেন। নানুর, লাভপুর ব্লক-সহ জেলার সর্বত্র অধিকাংশ স্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলেই আসেননি। আবার মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু স্কুলে হাজির থাকতে দেখা গেল চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। যেমন রঘুনাথগঞ্জ সেকেন্দ্রা হাইস্কুলে দু’জন শিক্ষক ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি পান। তাঁদের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত চাকরি বাতিলের বিষয়ে লিখিতভাবে তাঁরা কোনও নথি পাননি। সেজন্য সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের উপরে তাঁরা ভরসা রাখতে চাইছেন।
এদিকে পশ্চিম বর্ধমানে কোনও স্কুলেই যাননি চাকরিহারা শিক্ষকরা। ব্যতিক্রম দু’-একটি স্কুল। রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজ হাই স্কুলে দুই শিক্ষকের নাম ছিল ২০১৬ সালের প্যানেলে। তাঁরা অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও স্কুলে হাজির হয়েছেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, যেহেতু তাঁদের কাছে কোনও নির্দেশিকা আসেনি, তাই স্কুল চললে ক্লাসে হাজির হচ্ছেন ওই শিক্ষকরা। তবে আগামী দিনে তাঁরা কী করবেন, তাঁদের বেতন কাঠামো সঠিক থাকবে কি না, সে বিষয়ে কিছুই জানে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
হুগলি জেলার ক্ষেত্রে কিছু বিক্ষিপ্ত চিত্র ধরা পড়েছে। কেউ কেউ ‘স্বেচ্ছাশ্রমে’ রাজি হয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্কুলে অনুপস্থিত। রিষড়ার বিদ্যাপীঠ ইউনিট-টু হিন্দি মাধ্যম স্কুলের ১৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ১২ জনই চাকরি হারিয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁদের মধ্যে আট জনই স্কুলে গিয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বাকি চার জনও স্কুলের কাজেই ছিলেন। তবে তাঁরা চাইছেন, যেন বেতন বন্ধ না-হয়ে যায়। কত জন স্কুলে গিয়েছেন, কত জন যাননি, সেই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও তথ্য মেলেনি।