• প্যানেল বাতিলে নতুন করে চর্চায় ফিরেছে ‘পণ্ডিতস্যার’
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    সুপ্রিম-নির্দেশে চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। ঠিক সেই আবহে নতুন করে চর্চায় ফিরেছে ‘পণ্ডিতস্যার’। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে লেখা ‘পণ্ডিতস্যার’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬ সালে। কী অদ্ভুত সমাপতন! সদ্য এসএসসি-র ২০১৬ সালেরই প্যানেল বাতিলের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

    ‘পণ্ডিতস্যার’ পড়ে লেখক সুকেশকুমার মণ্ডলকে সম্মানিত করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। উপন্যাসের কাহিনিতে লেখক দেখিয়েছেন, কী ভাবে প্রভাব খাটিয়ে একজন অযোগ্য শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যায়। এবং শেষে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তাকে চাকরি খোয়াতে হয়। ২০১৬ সালের এসএসসি-র প্যানেল বাতিল হওয়ার পরে তাজ্জব উপন্যাসের পাঠকরা। সদ্য যা ঘটল তার প্রতিফলন তো ন’বছর আগে কাহিনি আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ‘পণ্ডিতস্যার’ উপন্যাসে! লেখকের সহাস্য প্রতিক্রিয়া, ‘সাহিত্য তো সমাজেরই দর্পণ!’

    পাঁশকুড়ার শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকেশকুমার মণ্ডল ২০০৪ সাল থেকে পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারে একটি ছাপাখানা চালান। ছাপাখানা চালানোর পাশাপাশি লেখালেখিও করেন। উপন্যাস, গবেষণাগ্রন্থ মিলিয়ে মোট ১৭টি বই লিখেছেন তিনি। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘পণ্ডিতস্যার’ সুকেশকে বিশেষ পরিচিতি এনে দেয়। পাঠক মহলেও ব্যাপক সাড়া ফেলে ‘পণ্ডিতস্যার’। কী রয়েছে উপন্যাসে? ‘পণ্ডিতস্যার’ উপন্যাসের চরিত্র নীলমোহন একজন সৎ শিক্ষিত যুবক। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের তল্পিবাহক না-হওয়ায় এবং ঘুষ দিতে না-পারায় সে শিক্ষকতার চাকরি পায়নি। অথচ ঘুষ দিয়ে চাকরি পায় উপন্যাসের খলনায়ক রবিরঞ্জন শর্মা। এক পণ্ডিতের পাণ্ডুলিপি চুরি করে রবিরঞ্জন নিজের নামে একটি বইও প্রকাশ করে ফেলে।

    পাণ্ডিত্যের জন্য রবিরঞ্জন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান মঞ্চেই তার চুরি ধরা পড়ে যায়। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে রবিরঞ্জনের চাকরি চলে যায়। গ্রেপ্তার হয় রবিরঞ্জন। উপন্যাসটি প্রকাশ পাওয়ার পরে সুকেশ রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘রিসিভিং’ বিভাগে গিয়ে বইটি জমা দেন। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ডাক পান সুকেশ। পরের দিন, অর্থাৎ ৯ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে সুকেশের সঙ্গে দেখা করেন। ‘পণ্ডিতস্যার’-এর ইংরেজি অনুবাদ পড়ে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করে সুকেশকে চিঠি পাঠান। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। কিন্তু আজ থেকে ন’বছর আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির হুবহু প্রতিফলন দেখা যায় ‘পণ্ডিতস্যার’ উপন্যাসে।

    ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ার পরে ‘পণ্ডিতস্যার’- এর পাঠকরা বিস্মিত। পাঁশকুড়ার বাসিন্দা, কৃষিবিজ্ঞানী কাঞ্চনকুমার ভৌমিক বলেন, ‘সুকেশ আজ থেকে ন’বছর আগে যা লিখেছিলেন, আজ তার হবহু প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সাহিত্য সমাজের দর্পণ, এটা ছোট থেকে জেনে এসেছি। এখন তা প্রত্যক্ষও করছি। লেখককে অনেক অনেক অভিনন্দন।’ লেখক সুকেশের কথায়, ‘সেই সময়ে দেখেছিলাম, টাকা দিলেই চাকরি মিলে যাচ্ছে। অনেক বেকার যুবককে তখন এ নিয়ে হা-হুতাশ করতেও দেখেছি। প্রতিবাদের দলিল হিসেবে ‘পণ্ডিতস্যার’ লিখেছিলাম। এখন তো আমার উপন্যাসের কাহিনির সঙ্গে বাস্তব হুবহু মিলে গেল। তবে দুর্নীতির ভিড়ে যে সব যোগ্যরাও চাকরি হারালেন, তাঁদের জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। আসলে মেধাবীরা আমাদের রাজ্যের সিস্টেমের শিকার। এর প্রতিকার জরুরি।’

  • Link to this news (এই সময়)