• দাম বাড়ছে কাঠের, নৌকা মেরামত করতেই ফতুর মৎস্যজীবীরা
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • রাকিব ইকবাল, শ্যামপুর

    আর কয়েক মাস বাদেই দক্ষিণ বঙ্গে বর্ষা নামবে। শুরু হয়ে যাবে ইলিশের মরশুম। সারি সারি নৌকা ইলিশ ধরতে নদীর বুকে নেমে পড়বে। তার আগে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। শ্যামপুরের রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী ডিহিমণ্ডল ঘাট, হুগলি নদীর পার্শ্ববর্তী গাদিয়াড়া, নবগ্রামের আইমা, ফুলেশ্বরের জেলেপাড়া এবং জগদীশপুরের শতমুখী এলাকায় বর্ষার আগে মাছ ধরার নৌকাগুলিকে সারিয়ে তুলতে জোর কদমে চলছে মেরামতির কাজ। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে কাঠের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। নৌকা মেরামতিতে যে কাঠ ব্যবহৃত হয় তার দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ফাঁপরে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা।

    শ্যামপুর এবং উলুবেড়িয়া এলাকার অনেক মৎস্যজীবী এবং নৌকার মালিকরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই বর্ষার আগে মাছ ধরার নৌকাগুলিকে মেরামত করতে হয়। তার জন্য বাজার থেকে কাঠ কিনে আনতে হয়। নৌকায় কোনও ফুটোফাটা থাকলে কাঠের টুকরো দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। সেই কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা মেরামতের খরচ এখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। যাঁরা নৌকাগুলোকে মেরামত করেন তাঁদের মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই খরচ সামলাতে নাভিশ্বাস উঠছে মৎস্যজীবীদের।

    শ্যামপুরের মৎস্যজীবী শেখ খালেক বলেন, ‘প্রতি বছর কাঠের দাম যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে আমাদের পক্ষে বর্ষার আগে নৌকাগুলোকে মেরামত করা মুশকিল হয়ে উঠছে। একটা ছোট নৌকা মেরামত করতে গড়ে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় মেরামতির খরচও বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে নদীতে মাছ পড়ছে না। মৎস্যজীবীদের জালে আগের থেকে অনেক কম মাছ উঠছে। ফলে আয়ের তুলনায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। লাভের গুড় সব পিঁপড়েতে খেয়ে চলে যাচ্ছে।’ বহু বছর ধরে হুগলি নদীতে মাছ ধরছেন রাম ভুঁইয়া। তাঁর কথায়, ‘নদীতে মাছ ধরাটাই আমাদের জীবিকা। এই পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করব, সেই সামর্থ্য নেই। নৌকা সারাতেই যদি সব টাকা চলে যায়, তাহলে সংসার চালাব কী ভাবে?’

    নৌকার কারিগর দিলীপ মণ্ডল জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই নৌকার কিছু না কিছু কাঠ পরিবর্তন করতেই হয়। নৌকাগুলো সারাক্ষণ জলে থাকায় কাঠগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সেটাকে মেরামত করার পরে আলকাতরার প্রলেপ দিতে হয়। ছোট–বড় যে কোনও নৌকা তৈরি কিংবা মেরামত করতে শাল, বাবলা, ইউশি, অর্জুন, কপ্পুর, কুসুম, মউল, গর্জন, মেহগনি–সহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ ব্যবহার করা হয়। সমস্ত কাঠের দাম আগের থেকে ১৫–২০ শতাংশ বেড়েছে। তাতে মেরামতির খরচও বেড়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দু’-তিন‌ বছরে কাঠের দাম প্রতি কেবি’তে (১৯.৪৪ কিউবিক ফুট) ৫০০–৭০০ টাকা বেড়েছে। এক কেবি মালেশিয়ার শাল কাঠ কিনতে আগে যেখানে ২৫০০ টাকা লাগত, এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ৩২০০ টাকা। ফলে নৌকা মেরামতির খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

    মনিমোহন মণ্ডল বলেন, ‘শ্যামপুর এলাকায় বহু মানুষ নৌকা তৈরির পেশায় যুক্ত। অনেকে বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। একটা নৌকা মেরামত করতে কম করে দিন পনেরো সময় লাগে। নতুন নৌকা বানাতে প্রায় এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। নতুন নৌকা তৈরি করতে গেলে শুধু মজুরি বাবদ খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। যাঁরা নৌকা বানায় তাঁদের মজুরির খরচ একটু বেশি। কারণ, সবাই এই কাজ করতে পারেন না।’

  • Link to this news (এই সময়)