আবার শুভেন্দু! আবার নবান্ন অভিযান! এবং আবার সেই ছাত্রসমাজ! এ বার ২১ এপ্রিল, দাবি চাকরি থেকে মহার্ঘভাতা
আনন্দবাজার | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
আবার নবান্ন অভিযানে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ।
‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের একটা অংশ ২১ এপ্রিল নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে। দাবি, চাকরিহারাদের সঙ্গে দেখা করলে তাঁদের সঙ্গেও দেখা করতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁরা এই অভিযানে পাশে চেয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। এ বার এই ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযানে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। এটা সেই সংগঠন যারা আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নবান্ন অভিযান করেছিল। রাজ্যের শাসকদল তো বটেই, বিরোধী দলের নেতৃত্বের একাংশেরও অভিযোগ ছিল, এই সংগঠনের নেপথ্যে রয়েছে বিজেপি, তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু। এ বার সেই সংগঠনই ‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযানে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল। এই অভিযানে যোগ দিচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের সংগঠন ‘সংগ্রামী যৌথমঞ্চ’, যারা বর্তমানে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) আন্দোলন করছে।
২০০৯ সাল থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাঁরা ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন, তাঁদের ১২টি সংগঠন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে আগামী ২১ এপ্রিল। সংগঠনগুলির একাংশের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এসএসসির চাকরিহারারাও নবান্ন অভিযানে তাদের পাশে থাকবে। সোমবার বিধানসভায় শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করতে যান চাকরিহারাদের একাংশ। তখন বিজেপি বিধায়কও তাঁদের এই নবান্ন অভিযানে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, চাকরিহারাদের একাংশ তাতে রাজি হয়েছেন। যদিও চাকরিহারাদের তরফে এখনও এই বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। ওই অভিযানে এ বার যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে গত বছরের অগস্টে নবান্ন অভিযান চালিয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। সেই অভিযানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল অভিযানকারীদের। হাওড়া এবং কলকাতায় তুলকালাম হয়। গ্রেফতার করা হয় ওই ছাত্র সমাজের সদস্য সায়ন লাহিড়ীকে। নবান্ন অভিযানে পুলিশি দমনপীড়নের অভিযোগ তুলে পরের দিন বাংলা বন্ধ ডাকে বিজেপি। আড়াল থেকে অভিযানে বিজেপির সমর্থন ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। নবান্ন অভিযানে গোলমাল চলার সময়েই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার লালবাজারের উদ্দেশে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন। পরে হাই কোর্ট জামিন দেয় সায়নকে। রাজ্য সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। সেখানেও সায়নের জামিনের পক্ষে রায় হয়। তিনি মুক্তি পাওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে ধন্যবাদ জানান। তাঁর যুক্তি ছিল, আদালতের লড়াইয়ে সরাসরি বিজেপি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যদিও আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই ছাত্র সমাজের আন্দোলনে তাঁদের সমর্থন নেই। বাংলা বন্ধেও তাঁদের সায় ছিল না। সংগঠনের সদস্যদের দাবি ছিল, ন্যায়বিচার তাঁরাও চান। কিন্তু শান্তিপূর্ণ পথে। পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বা হিংসাত্মক প্রতিবাদ করে নয়, শান্তিপূর্ণ পথেই মিলবে ন্যায়বিচার।
ছাত্র সমাজ যদিও অভিযানের পরে চুপ করে বসে থাকেনি। সমাজমাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে। দ্বিতীয় বার নবান্ন অভিযানও করতে চেয়েছিল। এ বার তারা আবার ‘বঞ্চিত’দের পাশে দাঁড়িয়ে নবান্ন অভিযানে শামিল হবে বলে জানাল। এই প্রসঙ্গে সায়ন বলেন, ‘‘ভারতে গুরুশিষ্য পরম্পরা অতি প্রাচীন বিষয়। আমরা হাজার হাজার চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াব। এটা আমাদের কর্মসূচি নয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে ছাত্র সমাজকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।’’