• মাপকাঠি হবে ‘মিরর ইমেজ’? মিলবে কোথায়, ধন্দে সবাই
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: সুপ্রিম–রায়ের পরে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে সেই ওএমআর শিট এবং তার মিরর ইমেজ। এসএসসি–র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বারবার এই ওএমআর শিট ও তার মিরর ইমেজ প্রকাশ্যে আনা নিয়ে বারবার বিতর্ক হয়েছে। ২০১৬–এর এসএসসি–র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ বাছতে ওই পরীক্ষার সমস্ত চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর–এর মিরর ইমেজ সামনে আনার দাবিতে সরব কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

    কয়েকজন চাকরিহারাকে নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আচমকাই স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) অফিসে যান তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই যোগ্য-অযোগ্য বাছাই হচ্ছে না। পরীক্ষায় বসা প্রার্থীদের ওএমআর–এর মিরর ইমেজ অবিলম্বে প্রকাশ্যে আনা হোক।’ যদিও এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁকে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যখন বিচারপতি ছিলেন, তখন উনিই রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথা বলতেন। যেমন— প্যানেল বাতিল করে দেবো, সব ভুয়ো, চাল–কাঁকর আলাদা করা যাচ্ছে না! আর সাংসদ হয়ে এখন বিচারপতির মতো কথা বলছেন। যোগ্য ও অযোগ্য নির্ধারণ করা উচিত! এখন একটা কমিটি গঠন করা উচিত! সেই কমিটির মাথায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা অন্য কাউকে বসানো উচিত!’

    তথাকথিত ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা কমিশনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, কেন ওএমআর শিট নষ্টের আগে তার মিরর ইমেজ বা ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ করা হলো না! নাকি সংরক্ষণ করা হলেও, সেই তথ্য আদালতে পেশ করার সদিচ্ছার অভাব ছিল এসএসসি–র? আবার আইনজীবীদের একাংশের দাবি, প্যানেলে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে, যা বেআইনি। যদিও বিকাশ ভবনের কর্তারা তা খারিজ করে দিয়েছেন।

    এক কর্তার কথায়, ‘২০১৬ সালে নিয়োগ বিধিতে প্যানেল প্রকাশের পরে এক বছরই ওএমআর শিট সংরক্ষণের নিয়ম ছিল। সেই নিয়ম মেনেই নির্দিষ্ট সময়ে ওএমআর নষ্ট করা হয়েছে।’ যদিও আইনজীবীদের একাংশের পাল্টা যুক্তি, ‘তা হলে ওএমআর–র মিরর ইমেজ সংরক্ষণের পরেই ওএমআর শিট ধ্বংস বা নষ্ট করার কথা।’ সেই মিরর ইমেজ সংরক্ষণ নিয়ে এসএসসি–র কোনও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

    চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে প্ল্যান এ–বি–সি–ডি–ই বলছেন সেখানে কি ভবিষ্যতে সেই সব মিরর ইমেজ বা ডিজিটাল নথি কি খুঁজে পেতে পারে এসএসসি? বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে প্রথম থেকেই মামলা লড়েছেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। তিনি এ দিন বলেন, ‘এসএসসি জানিয়েছিল, ওএমআর নষ্ট করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মূল নথি নষ্টের আগে মিরর ইমেজ সংরক্ষণ হবে। কিন্তু এসএসসি–র কাছে ওএমআর–র কোনও মিরর ইমেজ পাওয়া যায়নি। সেটা মিরর ইমেজ রাখার পরে নষ্ট করা হয়েছে, নাকি আদৌ মিরর ইমেজ রাখাই হয়নি, সে বিষয়ে এসএসসি কিছু বলেনি।’

    অভিজিৎ এ দিন বলেন, ‘আমরা যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ্যে আনার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব।’ তারপরে সেই তালিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অভিজিৎ। তাঁর যুক্তি, সেখানে ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত প্রার্থীদের যা শাস্তি দেওয়ার, দেওয়া হবে। কিন্তু ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের কোনও শাস্তি দেওয়া যাবে না। বিকেলে এসএসসির দপ্তর থেকে বেরনোর সময়ে অভিজিৎ বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছি। চেয়ারম্যান না থাকায়, তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। কমিশনে থাকা পুলিশ আধিকারিককে জানিয়েছি, আমরা বুধবার আবার আসব।’

    তাঁর আরও যুক্তি, সিবিআই হরিয়ানা থেকে ওএমআর সংক্রান্ত একটি মাদার ডিস্ক উদ্ধার করেছে। কমিশন ধরে নিক, সেটিই সঠিক তালিকা। তারপরে সেখান থেকে যাচাই করে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করা হোক। যদিও ব্রাত্যর কটাক্ষ, ‘ওঁর (অভিজিৎ) সাক্ষৎকারে শুনেছিলাম, উনি এক সময়ে চেষ্টা করতেন অভিনেতা হতে। থিয়েটারের একজন নিবিষ্ট ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, উনি যদি কখনও অভিনেতা হতে চান, একজন প্রকৃত অভিনেতার বোঝা উচিত, কোনটা কার কাজ। কোন সময়ে কোন পার্ট করতে হয়!’

  • Link to this news (এই সময়)