• রায়ের আগেই বেহাল জেলার বহু স্কুল
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: চাকরিহারা তথাকথিত 'যোগ্য' শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে বহাল রাখতে ইতিমধ্যে সু্প্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু সেই আবেদনেই পর্ষদ স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাজ্যের পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলগুলোয় শিক্ষক–শিক্ষিকাদের হাহাকার কোন স্তরে পৌঁছেছে। রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বহু স্কুলেই বিষয়ভিত্তিক মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন। পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, মাধ্যমিক স্তরও ব্যতিক্রম নয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে চাকরি বাতিলের আগেই বহু স্কুলে বর্তমানে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণিতে বিষয়ভিত্তিক মোটে একজন করে শিক্ষক–শিক্ষিকা আছেন। এই অবস্থায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে হলে রাজ্যজুড়ে সমস্ত স্কুলে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।

    পর্ষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১৭ হাজার ২০৬ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। মোট ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৬৮ জন শিক্ষক–শিক্ষিকার নিরিখে এই সংখ্যাটা ১১.৩৫ শতাংশ। মাধ্যমিক স্তরের ৯,৪৮৭টি স্কুলের মধ্যে আবার ৬,৯৫২টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলও আছে। আবার পর্ষদের অধীনে ৬,৩৫০টি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। সব মিলিয়ে সাড়ে ৭৮ লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এই তিনটি স্তরে পাঠরত। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট নতুন নিয়োগ অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ না–হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট 'যোগ্য' শিক্ষক–শিক্ষিকাদের চাকরিতে বহাল রাখার অনুমোদন যাতে দেয়, সেই আর্জি জানানো হয়েছে।

    সুপ্রিম–রায়ে চাকরি বাতিলের ফলে পর্ষদের আবেদনে বেশকিছু স্কুলের বেহাল দশার ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন— মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালয়ে মোট ছাত্রী ১৯২৬ জন। ২৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ২৫ জনের চাকরি বাতিলের পরে মোটে দু'জন শিক্ষক রয়েছেন। সেখানে পড়ুয়া পিছু শিক্ষকের অনুপাত (পিটিআর) ৭১:১ বদলে এক লাফে বেড়ে ৯৬৩:১ হয়ে যাবে। একই অবস্থা আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের হ্যামিল্টন স্কুলে। ছ'জনের মধ্যে তিনজনের চাকরি চলে যাওয়ায় বিজ্ঞান পড়ানোর একজনও শিক্ষক থাকবেন না।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছোট মোল্লাখালি মঙ্গলচন্দ্র বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে ৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ৮ জনেরই চাকরি চলে গিয়েছে। ফলে একজন শিক্ষক পড়ে আছেন। এই জেলারই উপকূল অঞ্চলে জি প্লট বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে আদালতের রায়ে ১৩ জন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় ১৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য মোটে চারজন শিক্ষক পড়ে থাকলেন। সীতারামপুর জি প্লট মিলন বিদ্যানিকেতনে (এইচএস) ১৮ জন শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে। ফলে ৫১৪ জন পড়ুয়াকে পড়াবেন দু'জন শিক্ষক। পিটিআর ২৬:১ থেকে বেড়ে এক ধাক্কায় ২৫৭:১ হবে।

    উত্তর ২৪ পরগনা হাজিনগর আদর্শ হিন্দি বিদ্যালয়ে (এইচএস) ৪৮ জন শিক্ষকের মধ্যে আদালতের রায়ে ৩১ জন শিক্ষককে ছাঁটাই হলে এই স্কুলে মাত্র ১৭ জন শিক্ষক থাকবেন। স্কুলে মোট পড়ুয়া ১০৪৩ জন। জলপাইগুড়ির বানারহাট স্কুলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত, রসায়ন এবং অর্থনীতির মতো মূল বিষয় পড়ানোর কোনও শিক্ষকই নেই। মুর্শিদাবাদের গোথা এ.আর. উচ্চ বিদ্যালয়, ৩১ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। স্কুলে ২২৩২ জন পড়ুয়া আছে। ৪৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩১ জনের চাকরি চলে গেলে, এই স্কুলে মাত্র ১৭ জন শিক্ষক থাকবেন। ফলে পিটিআরের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। যা ৪৭:১ থেকে কমে ১৩১:১ হয়ে যাবে।

    সরকারের পরিসংখ্যান দেখে পড়ুয়া ও শিক্ষামহলের প্রশ্ন, এতদিন স্কুলশিক্ষা দপ্তর, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন কী করছিল?

    বিকাশ ভবনের কর্তাদের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল সম্মতি দেয়নি বলেই ২০২২ সালে এসএসসি উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগের নয়া বিধির খসড়া পাঠালেও আজ পর্যন্ত তার গেজেট বিজ্ঞপ্তি হয়নি। ফলে নিয়োগ অধরা।

  • Link to this news (এই সময়)