• ‘টার্মিনেশন লেটার না আসা পর্যন্ত পড়িয়ে যাব’
    এই সময় | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, ভাঙড়: মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ সত্ত্বেও চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশই মঙ্গলবার স্কুলে যোগ দেননি। কিন্তু ব্যতিক্রম সাগরের সুন্দরবন জনকল্যাণ সঙ্ঘ বিদ্যানিকেতনের সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মল্লিক। চাকরি হারানোর পর আর পাঁচ জনের মতো তিনিও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দিন স্কুলে গিয়েছিলেন। তাঁর সাফ কথা, ‘যতদিন টার্মিনেশন লেটার না আসে, ততদিন স্কুলে পড়িয়ে যাব।’

    তিনি বলেন, ‘এত দিন স্কুলে শিক্ষকতা করে এসেছি। হঠাৎ করে যদি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিই, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।’ মুখ্যমন্ত্রী যোগ্য শিক্ষকদের পাশে থাকার বার্তা দিলেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না মনিরুল। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো বাস্তবে রূপায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। পুনরায় আমাদেরকে চাকরিতে স্থায়ী না করা পর্যন্ত আমাদের উদ্বেগ কিছুতেই দূর হবে না।’

    রসায়নের শিক্ষক মনিরুল জানিয়েছেন, স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিতে ঢোকার আগে তিনি অন্য একটি সরকারি চাকরি করতেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, তিনি চাইলে সেখানে ফিরে যেতে পারেন। তা সত্ত্বেও তিনি এখনই শিক্ষকতার চাকরি ছাড়তে নারাজ। ওই স্কুলের আর এক চাকরিহারা শিক্ষক সঞ্জীব মাইতি বলেন, ‘আমি পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক। স্কুলে আসাটা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছুতেই স্কুল ছেড়ে থাকতে পারছি না। এখনও আমরা টার্মিনেশন লেটার পাইনি। তার জন্য আমরা এখনও স্কুলে আসা বন্ধ করিনি। আমি আগে প্রাথমিক শিক্ষক ছিলাম। চাকরি ফিরে না পেলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আমাকে হয়তো পুরোনো জায়গায় ফিরে যেতে হবে।’

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের পোলেরহাট হাই স্কুল, কাঠালিয়া হাই স্কুলে চাকরি হারানো কোনও শিক্ষক–শিক্ষিকা এ দিন কাজে যোগ দেননি। কচুয়া হাই স্কুলে আবার উল্টো ছবি দেখা গেল। চাকরি চলে যাওয়ার পরও তিন জন শিক্ষক এবং এক জন অশিক্ষক-কর্মচারী এ ‍দিন যথারীতি স্কুলে এসেছিলেন এবং তাঁরা হাজিরা খাতায় সই করেছেন। কচুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘শিক্ষক ও অশিক্ষক মিলিয়ে যে চার জন কর্মী এতদিন স্কুলে আসছিলেন না, মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে এ দিন তাঁরা স্কুলে এসেছিলেন। ক্লাসও নিয়েছেন। তাদের প্রিয় স্যার, ম্যাডামদের পুনরায় ক্লাসে দেখতে পেয়ে ছাত্র–ছাত্রীরা খুব খুশি হয়েছে।’

    ভাঙড়ের পোলেরহাট হাই স্কুলে ৬ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তাঁরা কেউ এ দিন স্কুলে আসেননি। কারবালা হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু তহা মণ্ডল জানিয়েছেন, চাকরি হারানো কোনও শিক্ষকই স্কুলে উপস্থিত হননি। ভাঙড়ের কাঠালিয়া হাই স্কুলেও চাকরিহারা তিন শিক্ষক এবং এক জন অশিক্ষক কর্মী এদিন স্কুলে আসেননি। সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ফুল মালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঋতুভগত হাইস্কুলে ৬ জন শিক্ষক চাকরিহারা হয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র দু’জন শিক্ষক এ দিন স্কুলে এসেছিলেন।

    মুড়িগঙ্গা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান শান্তনু জানার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা পাথরপ্রতিমার একটি স্কুলের শিক্ষাকর্মী ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও তিনি স্কুলে যাননি। মুড়িগঙ্গা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল উপপ্রধান সুভাষ দাসের মেয়ে মধুমিতা দাসও রয়েছেন চাকরিহারাদের তালিকায়। সাগরের ধবলাট লক্ষ্মণ পরবেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী ছিলেন মধুমিতা। তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছে বলে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)