দিব্যেন্দু সরকার
সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারা শিক্ষকদের স্কুলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও হুগলির আরামবাগ মহকুমায় অধিকাংশ স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারা কাজে যোগ দেননি। দু’–একটি স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারা কাজে ফিরলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে আগামী দিনে তাঁরা আর স্কুলে আসবেন কি না, তা ভেবে উঠতে পারছেন না অনেকে।
শিক্ষকের অভাবে গভীর সঙ্কটে পড়েছে স্কুলগুলো। শিক্ষক–শিক্ষিকারা না এলে পঠনপাঠন কী ভাবে চলবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারা শিক্ষকদের কাজে ফিরতে বলায় অনেকেই আশা করেছিলেন, হয়তো মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। কিন্তু স্কুলে যোগ না দিয়ে চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কথায় খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। খানাকুলের নতিবপুর ভূদেব বিদ্যালয়ের সাত জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন শিক্ষক এদিন স্কুলে এসেছিলেন। এঁরা হলেন আব্দুল মোতালেব শেখ এবং মহম্মদ শাহরুল ইসলাম। আর পাঁচটা দিনের মতোই তাঁরা হাজিরা খাতায় সই করেছেন। ক্লাসও নিয়েছেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলীপ দোলুই বলেন, ‘যে দু’জন চাকরিহারা শিক্ষক এদিন এসেছিলেন তাঁরা যথারীতি ক্লাস নিয়েছেন। আমি তাঁদের কিছু বলিনি। কারণ, আমাদের কাছে উপরতলা থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি।’ কামারপুকুর নয়নতারা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের যে তিন জন শিক্ষিকার চাকরি চলে গিয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই অন্য জেলার বাসিন্দা। তাঁরা কেউ স্কুলে আসেননি।’ আরামবাগের কেশবপুর মহেন্দ্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজকুমার খামরুই জানিয়েছেন, এই স্কুলের মোট পাঁচ জন চাকরিহারা শিক্ষকই কাজে যোগ দেননি।
বদনহঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু সিংহ বলেন, ‘এখন যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে আমাদের মতো প্রধান শিক্ষকদের সত্যিই কিছু করার নেই। আমরা কাউকে আসতে বলতে পারব না, আবার নিষেধ করতেও পারব না।’ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন খানাকুলের গুজরাট জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষক অভিজিৎ পালুই। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির থাকলেও এদিন তিনি স্কুলে যাননি।
‘এই সময়’কে তিনি ফোনে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিশেষ কাজে স্কুলে যেতে পারেননি। তবে বুধবার থেকে স্কুলে যাবেন। বাকিরা অবশ্য এখনও দোটানায় রয়েছেন। চাকরিহারা এক শিক্ষকের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী আমাদেরকে এখন স্কুলে ‘ভলান্টিয়ারি সার্ভিস’ দিতে হবে। এটা কিছুতেই মানা যায় না। আমরা সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে তবেই চাকরি পেয়েছি। এতদিন কাজ করে আসার পর স্বেচ্ছাসেবক হতে পারব না।’