রাজ্য পুলিশের ডিজি পদে নিয়োগের জন্য গত বছর নভেম্বর মাসে নতুন নিয়ম প্রনয়ণ করে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার। সেই নিয়ম মোতাবেক ডিজি পদে বাছাইয়ের জন্য রাজ্যের অধীনেই সিলেকশন কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার সেই একই পথে হাঁটল বাংলাও। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল পদে নিয়োগের জন্য নয়া নিয়ম প্রণয়নের প্রস্তাবে মঙ্গলবার অনুমোদন দিল মমতার সরকার।
প্রসঙ্গত ২০০৬ সালের প্রকাশ সিং মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, প্রতিটি রাজ্য সরকারকে ডিজি নিয়োগের জন্য বর্তমান ডিজির অবসরের তিন মাস আগে ইউপিএসসি-তে রাজ্যের শীর্ষ আইপিএস অফিসারদের একটি তালিকা পাঠাতে হবে। ইউপিএসসি ওই তালিকা খতিয়ে দেখে তিনজনের একটি শর্টলিস্ট পাঠাবে, যাদের মধ্যে একজনকে ডিজি করা হবে।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অস্খায়ী ডিজি পদে রয়েছেন রাজীব কুমার। তাঁকে অস্থায়ী ডিজি পদে নিয়োগের কারণ রয়েছে বলে মনে করা হয়। কেননা ডিজি পদে নিয়োগের জন্য তাঁর নাম সুপারিশ করে দিল্লিতে পাঠালে নর্থ ব্লক থেকে কোনওভাবেই অনুমতি দেবে না বলে মনে করে নবান্ন। এই অবস্খায় রাজীব কুমারের চাকরির মেয়াদ ৬ মাস বাকি থাকতেই নয়া নীতি প্রনয়ণ করতে চলেছে রাজ্য। যাতে সেই নিয়ম মোতাবেক রাজীব কুমারকে স্থায়ী ডিজি পদে নিয়োগ করার প্রক্রিয়া সহজ হয়। সেক্ষেত্রে আরও ২ বছর ডিজি পদে থাকতে পারবেন রাজীব কুমার।
উল্লেখ্য, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল নিয়োগের ক্ষেত্রে একসময় উত্তরপ্রদেশকেও দিল্লির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হত। ডিজি পদে নিয়োগের জন্য ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছে সিনিয়র আইপিএস অফিসারদের নামের তালিকা পাঠাতে হত লখনউকে। এহেন পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশে পর পর চার বার অস্খায়ী ডিজি নিয়োগ করেছিল যোগী আদিত্যনাথ সরকার। যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় যোগী সরকারকে। ‘ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, উত্তরপ্রদেশ সিলেকশন অ্যান্ড অ্যাপয়েন্টমেন্ট রুলস, ২০২৪’ গত নভেম্বর মাসে যোগী মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইউপিএসসি-তে তালিকা পাঠানোর প্রথা বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা এখানে কার্যত কমে গেছে। যদিও কমিটিতে ইউপিএসসি-র একজন প্রতিনিধি থাকবেন, তবু নিয়ম প্রণয়ন হয়েছে ১৮৬১ সালের ইন্ডিয়ান পুলিশ অ্যাক্ট-এর ভিত্তিতে, আলাদা কোনও নতুন আইন গৃহীত হয়নি।
যোগী রাজ্যের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ডিজি নিয়োগ করবে একটি সিলেকশন কমিটি, যেখানে প্রার্থীর অবশিষ্ট চাকরির মেয়াদ, অভিজ্ঞতা ও পরিষেবা রেকর্ড বিবেচনা করা হবে। যোগ্যতার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যিনি ডিজি হবেন, তাঁর অবসরের আগে অন্তত ছ’মাস চাকরি বাকি থাকতে হবে এবং নিয়োগ পাওয়ার পরে তিনি অন্তত দু’বছর পদে থাকবেন। এই সিলেকশন কমিটির নেতৃত্ব দেবেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের মুখ্য সচিব, ইউপিএসসি-র একজন প্রতিনিধি, উত্তরপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মনোনীত ব্যক্তি, স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধি, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বা মুখ্যসচিব স্তরের অফিসার এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত ডিজি।