• জেলায় জেলায় ধুন্ধুমার, চাকরিহারাদের বিক্ষোভে তোলপাড় ডিআই অফিস
    ২৪ ঘন্টা | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় বলেছেন কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি যাবে না। চাকরিহারাদের জন্য আইনি লড়াই হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই আশ্বাসের পরও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না চাকরিহারারা। বুধবারও জেলায় জেলায় পথে চাকরিহারারা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে, শহিদ মিনারে এখনও জমায়েত রয়েছে চাকরিহারাদের।

    গতকাল মেদিনীপুরে ডিআই অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান চাকরিহারারা। আজ ঠিক বেলা বারোটায় কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত জেলায় জেলায় ডিআই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন যোগ্য চাকরিহারাদের মঞ্চ থেকে। রাজ্যের যে ১৯ হাজার চাকরিহারা নিজেদের যোগ্য বলে মনে করছেন তারা আন্দোলন থেকে এক পাও নড়তে রাজী নন।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিআই অফিস রয়েছে আলিপুরে। অন্যদিকে, কলকাতার ডিআই অফিস হল কসবায়। চাকরিহারাদের বিক্ষোভ ওই দুই জায়গা এখন আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ওইসব ডিআই অফিস ঘোরও করেন দুই থেকে আড়াই হাজার চাকরিহারা। অনেকে জেলা থেকে কলকাতায় আসেন। যারা দক্ষিণ ২৪ পরগনার চাকরিহারা তার আজ অভিযান করছেন আলিপুরের ডিআই অফিসে।

    কসবায় ডিআই অফিসের গেট টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েন চাকরিহারারা।  পুলিসকর্মীরা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও পেরে উঠলে না। সেই সুয়োগে চাকরিহারারা গেট টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েন। পুলিসের বেষ্টনী কোনও কাঝেই এল না। এরপর গেটা থাকা তালা তার ভেঙে দেন। এরপরই বাইরে থাকার বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী ভেতরে ঢুকে পড়েন। কসবা ডিআই অফিসের ভেতরে তুলকালাম কাণ্ডে বেধে যায়। এদিকে ডিআই ছিলেন দোতলায়। তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এসবের মধ্য়ে বিপাকে পড়ে যায় পুলিস। এর মধ্যেই বিপুল সংখ্যাক পুলিস এসে হাজির হন। শুরু হয়ে যায় লাঠিচার্জ। ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় বিক্ষোভকারীদের। বহু বিক্ষোভকারী আহত হন।

    শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও চাকরি হারানোর প্রতিবাদে ফের উত্তাল হল বালুরঘাট শহর। মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথপুর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে ডিস্ট্রিক্ট ইনস্পেক্টর (ডিআই) অফিসের দিকে অগ্রসর হলে পুলিস প্রথমে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। সেই সময় পুলিস ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে তুমুল বচসা এবং ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

    তবে বাধা পেরিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জোরকরে ডিআই অফিস চত্বরে প্রবেশ করেন। পরে তারা দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন এবং ডিআই সহ অন্যান্য অফিসারদের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে ডিআই অফিসের মূল কক্ষে ও বাইরের দুটি গেটে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা।

    আন্দোলনকারীদের দাবি, যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের দ্রুত পৃথক করে প্রকৃত যোগ্যদের আবার তাঁদের পুরনো স্কুলে পুনর্বহাল করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা শিক্ষাকতা করেও অনিয়মের কারণে চাকরি হারিয়েছেন, যা তাঁদের জীবিকা এবং সম্মান—উভয়ের উপর আঘাত।

    পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শক এর সমস্ত দপ্তরের মেরে দিল তালা।  এর আগে আসানসোল আশ্রম মোর অবরোধ করেছিল যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ পশ্চিম বর্ধমান জেলা শাখা।

    শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্ক থেকে মিছিল করে ডিআই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ২০১৬ এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা। এদিন বাঘাযতীন পার্ক থেকে শিলিগুড়ির ভেনাস মোড় এ বিক্ষোভ এবং কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে ডিআই অফিসের সামনে এসে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখিয়ে অবশেষে ডিআই অফিসে তালা ঝুলালো শিক্ষক শিক্ষিকারা। রয়েছে ব্যাপক পুলিশি প্রহরা। এদিন মূলত যোগ্যদের চাকরি ফেরাতে হবে এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এই বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান করেন।

    সুপ্রিম কোর্টের রায়দানে চাকুরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা এবার পথে নামলেন। জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক( DI )এ র অফিসে মিছিল গেটে পুলিসের সাথে বচসা। চাকুরিহারাদের সাফ দাবি যে চাকুরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের ও এম আর শিটের মিরর ইমেজ এস এস সিকে প্রকাশ করতে হবে।যোগ্য অযোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের দ্রুত সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করতে হবে।এমনকি রাজ্য সরকারকে আমাদের চাকুরি সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়ার দায় নিতে হবে। জলপাইগুড়িতে চাকরিহারা শিক্ষকরা জমায়েত শহরের টাউন ক্লাব মোর সংলগ্ন এলাকায়। ডিআই অফিসের উদ্দেশ্যে তারা রওনা। যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শীঘ্রই প্রকাশের দাবিতে জলপাইগুড়ি DI অফিসের তালা মারো অভিযানে বহু চাকরি হারার শিক্ষক শিক্ষিকারা জমায়েত হন।

    সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, আপনারা পড়াশোনা করুন, বাচ্চাদের মানুষ করুন। সার্ভিসে যান। ভলেন্টারি সার্ভিস করুন। কারণ আমাদের সুপ্রিম কোর্টে যেতে হচ্ছে রায়ের ব্যাখ্যার জন্য। আমরা চাই আইন আপনাদের সুরাহা করুক।

    মুখ্য়মন্ত্রী চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে অনেক কিছুই বলেছেন। কিন্তু আস্থা রাখতে পারছেন না চাকরিারারা। হুগলিতেও বিক্ষোভ দেখান চাকরিহারারা। বেলা বারোটায় জেলার চাকরিহারার হুগলি স্টেশনে জড়ো হন। সেখান থেকে স্টেশন রোড ধরে তারা যান। তারপরই ডিআই অফিসে তারা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য় মুখ্যমন্ত্রীর মৌখিক প্রতিশ্রুতি তাঁরা মানছেন না। ডিআই অফিস থেকে সরকারিভাবে যদি লিখিত ভাবে তাঁদের জানানো হয় তাহলে তারা স্কুলে যোগ দেবেন। দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরও বহু শিক্ষক স্কুলে যোগ দেননি। তবে বেশকিছু স্কুলে তাঁরা গিয়েছেন, পড়িয়েওছেন। তারা আজ ডিআই অফিস যাচ্ছেন সেখানে তালা দিতে।

    যোগ্য শিক্ষকদের ন্যায় বিচারের দাবিতে জেলা শিক্ষা ভবনে তালা ঝোলালো শীর্ষ আদালতের রায়ে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা । পুরুলিয়ায় ওই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় শিক্ষা ভবনের বাইরে । এদিন চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক শিক্ষিকারা পুরুলিয়া শহরের জেলা শিক্ষা দপ্তরের মাঠে জমায়েত করেন । সেখান থেকে ব্যানার পোস্টার ও ওএমআর সিট নিয়ে মিছিল করে শিক্ষা ভবনের মূল দরজার সামনে হাজির হন । সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।  

    যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের মিছিল শুরু হয় হুগলি স্টেশন থেকে। হুগলি ডিআই অফিস পর্যন্ত দাবি ও প্রতিবাদ মিছিল। যোগ্য অযোগ্য পৃথক করার দাবি। চাকরি ফেরানোর দাবি। স্কুলে স্বাভাবিক পঠন পাঠন ফেরানোর দাবি। বর্ধমানের ডিআই অফিসে চাকরিহারা শিক্ষকদের ঘেরাও অভিযান শুরু হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ডিআই অফিসে চাকরিহারা শিক্ষক অশিক্ষকদের বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ডিআইকে। অফিসের সামনে প্ল্যাকার পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষোভকারীরা। কৃষ্ণনগর সদর মোড়ে চাকরিহারারা পথ অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়েন। আসানসোল আশ্রমমোড় অবরোধ করেন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ প্রমাণ শাখা। হাতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। তাঁরা চান রাজ্য সরকার লিস্ট প্রকাশ করুক কারা যোগ্য আর কার অযোগ্য।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)