নজরে নতুন প্রজন্ম, বাংলা নববর্ষে তাই ইংরেজি পঞ্জিকা
প্রতিদিন | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
অভিরূপ দাস: বাংলা বোঝেন। কিন্তু পড়তে পারেন না। ইংরেজি মিডিয়ামের এমন জেন জেড-বাঙালিদের জন্যেও পঞ্জিকা আনছে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার কর্ণধার। যাঁরা বাংলা বুঝতে পারেন না, তাঁদের জন্য ইংরেজিতে লেখা থাকবে কোন রাশির জন্য কোন দিন শুভ, কবে একাদশী? কবে বেগুন খাওয়া বারণ।
পাঁজি অনুযায়ী ছ’দিন বাকি বাংলা নববর্ষের। তার আগে বাংলার প্রথম ‘ইংরেজি পঞ্জিকা’ নিয়ে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার কর্ণধার অরিজিৎ রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, “নতুন প্রজন্মের বহু বাঙালি গুগলে পঞ্জিকা সার্চ করে। হাতের সামনে যেগুলো পায় সেগুলো মূলত ভিনরাজ্যের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। বাঙালি বছর-মাস-তিথি-নক্ষত্র সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের কথা মাথায় রেখেই গুপ্তপ্রেসের বাংলা পঞ্জিকা ইংরেজিতে ছাপানো হচ্ছে।” কলেজ স্ট্রিটে একসময় ছাপাখানা ছিল গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার। আশি জন কর্মচারী কাজ করতেন। সে ছাপাখানা অতীত। এখন বাইরের ছাপাখানায় ছাপা হয়, সূর্য সিদ্ধান্ত মেনে গুপ্তপ্রেসের পঞ্জিকা। বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, ছাপা কমলেও আগ্রহ কমেনি পঞ্জিকা নিয়ে। বরং উত্তরোত্তর বাড়ছে তা। অরিজিৎ রায়চৌধুরির কথায়, “ছাপার কাগজের জায়গা নিয়েছে পিডিএফ। বহু মানুষ হোয়াটসঅ্যাপে, মেইলে পঞ্জিকা চান। তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় অনলাইনে। বিনিময় মূল্য ২৫০ টাকা।”
১৮৬৯ সালে দুর্গাচরণ গুপ্তর হাত ধরে পথ চলা শুরু। ১৫৫ পেরিয়ে ১৫৬ বছরে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা। এই ২০২৫-এ বাণিজ্যক্ষেত্রে যে হাতেগোনা বাঙালির পায়ের ছাপ রয়ে গিয়েছে তার মধ্যে একজন অরিজিৎ রায়চৌধুরি। ১ টাকা, ২ টাকা থেকে দাম বাড়তে বাড়তে এখন গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার পুস্তক মূল্য দুশো টাকা। আজ বুধবার তা প্রকাশ পাবে। বর্তমানে শাস্ত্রজ্ঞ অচিন্ত্য ভট্টাচার্যর গণনা দিয়ে তৈরি হয় গুপ্তপ্রেশের পঞ্জিকা। আগে তাঁর দাদু করতেন গণনার কাজ। বাংলার বাঙালিরা তো বটেই। ওড়িশার কটক, উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ, বারাণসী, দিল্লি, তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ, মুম্বই, রাজস্থানের জয়পুরের প্রবাসী বাঙালিরা এখনও পয়লা বৈশাখ এলেই খোঁজেন পঞ্জিকা।
ফোন করেন হেল্পলাইন নম্বরে। সেই চাহিদায় ভর করে এখনও টিকে রয়েছে বাঙালির পঞ্জিকা ব্যবসা। অনলাইনে যাঁরা খোঁজ নেন তাঁদের জন্য চালু হয়েছে ওয়েবসাইট। www.gupta-press.in। ওয়েবসাইটে ঢুকে যে কেউ পিডিএফের জন্য আবেদন করতে পারেন। রয়েছে দুটি হেল্প লাইন নম্বর। আড়াইশো টাকা খরচ করলেই পিডিএফ চলে আসবে মোবাইলে। ‘ডিজিটাল’ যুগে পিডিএফ ঘোরে এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে। “দ্রুত এমন প্রযুক্তি আনা হবে যিনি পিডিএফ কিনছেন তিনিই শুধু পড়তে পারবেন। রিড অনলি ফাইল চালু করা হবে।” জানিয়েছেন অরিজিৎবাবু। ১৫৫ বছর ধরে কিছু নিয়ম এখনও একই রকম। জুতোর ছবি দেওয়া বিজ্ঞাপন ছাপা হয় না পঞ্জিকায়। ট্রেনে-বাসে হাতে হাতে নিয়ে ঘুরতে চান যাঁরা, তাদের জন্য চালু হচ্ছে ১০ টাকার পুঁচকে পকেট পঞ্জিকাও।