সংশোধনাগারগুলিতে মহিলা বন্দিদের প্রেগনেন্সি টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে চলেছে WBHRC
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৯ এপ্রিল ২০২৫
আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে বন্দিদের প্রেগনেন্সি টেস্ট আগেই শুরু হয়েছে। এবার রাজ্যের অন্যান্য সংশোধনাগারগুলিতে মহিলা বন্দিদের প্রেগনেন্সি টেস্ট চালু করার বিষয়ে জোর দিতে চায়ছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। এ বিষয়ে দ্রুত সরকারকে চিঠি দিতে চলেছেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন তথা কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। বিশেষ করে প্যারোলে সংশোধনাগার থেকে বাড়িতে যাওয়া ও বাড়ি থেকে সংশোধনাগারে প্রবেশের সময় মহিলা বন্দিদের বাধ্যতামূলকভাবে এই পরীক্ষার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জানিয়েছেন, মহিলা বন্দিদের উপর যৌন নির্যাতনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ থাকায় এটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, কমিশন চায় রাজ্যের সব সংশোধনাগারে এই নিয়ম মেনে চলা হোক। এরজন্য প্রেগনেন্সি পরীক্ষায় পর্যাপ্ত কিট মজুত রাখতে হবে, যাতে কোনও মহিলা বন্দি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করা যায়।
চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, মানবাধিকার কমিশনের দল মেদিনীপুর সংশোধনাগার পরিদর্শন করেছে। তারা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছে যে মহিলা বন্দিদের জেলে প্রবেশের সময়, প্যারোলে মুক্তির সময় এবং প্যারোল শেষে জেলে ফেরার সময় নিয়মিত প্রেগনেন্সি টেস্ট করা হোক, যাতে কোনওরকমের বিতর্ক তৈরি না হয়। তবে, রাজ্য সরকার এখনও এবিষয়ে কোনও উত্তর দেয়নি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, বহরমপুর মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে তাদের দল পরিদর্শনের সময় দেখেছে সেখানে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি চাইছেন এটা সব হোম এবং সংশোধনাগারে করা হোক। যদিও এনিয়ে মহিলা বন্দিদের সম্মতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তর ২৪ পরগনার জয় প্রকাশ ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল চেঞ্জের ডিরেক্টর অধ্যাপক জয়দেব মজুমদার। তিনি জানান, যদি মহিলা বন্দিরা পরীক্ষায় সম্মতি না হন, তাহলে আইন কী করবে?
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের সমস্ত সংশোধনাগারগুলির হাল হকিকত খতিয়ে দেখতে ২০১৭ সালে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলার সূত্রেই সব সংশোধনাগার পরিদর্শন করে আদালতে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ আদালতবান্ধবকে দেওয়া হয়। সেই রিপোর্টেই উঠে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য সংশোধনাগারগুলিতে মহিলা বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি সামনে আসতেই তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। তারপরে মহিলা সংশোধনাগার এবং নাবালিকাদের থাকা হোমগুলিতে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা হাইকোর্টে। পরে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সমস্ত রাজ্যকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলে।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টে আদালত বান্ধবের জমা দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজ্যের একাধিক কারাগারে অন্তত ১৯৬টি শিশু তাদের মায়ের সঙ্গে রয়েছে। তাদের পিতৃ পরিচয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এছাড়াও মহিলা বন্দিদের গর্ভবতী হওয়ার কথাও জানানো হয়। এই ঘটনায় যাতে আর নতুন করে বিতর্ক তৈরি না হয় তার জন্যই এই পদক্ষেপ করতে চায়ছে কমিশন।