সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই দিশেহারা চাকরিহারা ‘যোগ্য’ প্রার্থীরা। চাকরি ফিরে না পেলে দু’দিনের মধ্যে মাওবাদী হওয়ার হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গেল তাঁদের মুখে। কেউ আবার জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে কলম ছেড়ে হাতে বোমা তুলে নেওয়ার কোথাও শোনালেন। বুধবার ঝাড়গ্রামের ডিআই অফিসে বিক্ষোভ দেখান চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
ঝাড়গ্রামের চাকরিহারা শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা একত্রিত হয়ে শহরের হিন্দু মিশন মাঠ থেকে মিছিল করে ডিআই অফিসের পৌঁছন। পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল আঁটোসাঁটো। ডিআই অফিস চলাকালীন বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে গলায় প্রতীকী ওএমআর শিট ও প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা।
যদিও ডিআই শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় তখন অফিসে ছিলেন না। ডিআই অফিসের বাইরেই থাকায় অফিসের বাইরেই প্রায় দু’ঘন্টা ধরে অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন তাঁরা। ডিআই ফিরলে তাঁর হাতে বেতন চালু রাখা, চাকরি ফেরানোর দাবি-সহ একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। এর মাঝেই এক চাকরিহারা শিক্ষক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে ওঠেন, ‘ছেলেগুলো অনেক কষ্ট করে হাতে কলম তুলেছিল। তাঁদের হাতে বন্দুক তুলে নিতে বাধ্য করবেন না। এই এলাকার ছেলেমেয়েদের মাওবাদী হতে কোনও সময় লাগবে না। দু’দিনে হয়ে যাবে। আমরা এটা চাই না। আমরা কলম ধরতে চাই, বন্দুক না।’
আদিবাসী সমাজের চাকরিহারা শিক্ষকরাও এ দিন তীর-ধনুক হাতে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। দুলাল মুর্মু নামে এক শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ‘চাকরি যদি না ফিরে পাই, আমি এইভাবে অস্ত্র ধরতে রাজি আছি। আমি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করতে পারি। আমি জঙ্গিদের দলে যোগদান করতে পারি, যদি চাকরি না ফিরে পাই। আমি একজন যোগ্য শিক্ষক।’
আলপনা রায় নামে আর এক শিক্ষিকা বলেন, ‘সম্মানের সঙ্গে আমাদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদের কোনও বেতন বন্ধ করা চলবে না। যদি তাই হয়, তা হলে আমরা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে অচল করব। আমরা কলম ধরতেও জানি অচল করার জন্য বোমা ধরতেও জানি।
চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুধবার জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখান। একাধিক জেলাতেই শিক্ষকদের অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় সংশ্লিষ্ট ডিআই অফিস চত্বরে। বীরভূম জেলায় কয়েকশো চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও ডিআই অফিস ঘেরাও কর্মসূচির আয়োজন করেন। সেখানেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা হুঁশিয়ারি দেন, ‘যে হাতে আমরা এতদিন কলম ধরেছি , সেই হাতে বোমা ধরতেও আমাদের সময় লাগবে না । আমাদের আর হারানোর কিছু নেই । আর যদি আমাদের স্কুলে যাওয়ার পথ আটকানো হয়, যদি টার্মিনেশন লেটার ধরানো হয়। তা হলে ডেথ সার্টিফিকেটটা আমরাই বানিয়ে নেব।’