• ক্যান্সার আক্রান্ত পথকুকুর, রাস্তার ধারেই কেমোথেরাপি
    বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: রাস্তার ধারে পড়ে কাতরাচ্ছিল পথকুকুরটি। যন্ত্রণায় তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। ওই চারপেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন পথচলতি মানুষজন। অবশেষে খবর পেয়ে এসে রোগ-যন্ত্রণায় কাতর ওই পথকুকুরকে উদ্ধার করেন জলপাইগুড়ির একটি পশুপ্রেমী সংস্থার সদস্যরা। ‘বাইক-অ্যাম্বুলেন্সে’ চাপিয়ে সারমেয়টিকে তাঁরা নিয়ে যান পশু হাসপাতালে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, কুকুরটি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরপরই দেরি না করে শুরু হয় চিকিৎসা। পশু হাসপাতালে একপ্রস্থ চিকিৎসার পর রাস্তার ধারেই কেমোথেরাপি চলে ওই পথকুকুরের। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর জমিদারপাড়ার এ ঘটনায় পশুপ্রেমী সংস্থার মানবিকতায় মুগ্ধ এলাকার বাসিন্দারা।

    ক্যান্সার আক্রান্ত পথকুকুরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা পশুপ্রেমী সংস্থার তরফে কৃষ্ণায়ন দাশগুপ্ত বলেন, প্রাণীটির জরায়ুতে টিউমার হয়েছিল। সেটি বড় আকার ধারণ করায় ফেটে যায়। তারপরই শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ক্যান্সার হয়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না হলে কুকুরটির মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। জমিদারপাড়ার বাসিন্দা মিনতি রায়ের বাড়িতে ছোট থেকেই ছিল সারমেয়টি। মাস খানেক আগে তার অসুস্থতা ধরা পড়ে। খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় প্রাণীটি। মিনতিদেবী বলেন, কুকুরটির জন্য আমাদের খারাপ লাগত। তবে এটা জানতাম না যে, ওর ক্যান্সার হয়েছে! পশুপ্রেমী সংগঠনের উদ্যোগে যে সারমেয়টির চিকিৎসা শুরু হল, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। 

    গত সাত বছর ধরে শহরে ঘুরে ঘুরে নিখরচায় পথকুকুরদের শুশ্রুষা করে চলেছেন কৃষ্ণায়ন। আর টিম গড়ে চার বছর ধরে এ কাজ করছেন তিনি। জলপাইগুড়ি শহরের পথকুকুরদের নিয়ে সমীক্ষাও চালিয়েছেন তাঁরা। ওই পশুপ্রেমী সংস্থার দাবি, জলপাইগুড়ি শহর এলাকায় প্রায় সাত হাজার পথকুকুর রয়েছে। এরমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্যান্সার আক্রান্ত পথকুকুরের সংখ্যা ১০-১৫টি।

    কৃষ্ণায়নের দাবি, আমরা বাইক-অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে দেখি, কোথাও কোনও পথকুকুর অসুস্থ কিংবা জখম হয়ে পড়ে রয়েছে কি না। এরকম কিছু দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে সেটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। 

    জলপাইগুড়িতে অসুস্থ বা জখম কোনও প্রাণীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। নেই অ্যানিমাল শেল্টারও। এ ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হলে আরও ভালোভাবে পথকুকুরদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাবে বলে দাবি পশুপ্রেমী সংস্থার। পশুপ্রেমী সংস্থার সদস্যদের বক্তব্য, পাহাড়পুর জমিদারপাড়ায় যে পথকুকুরটির ক্যান্সার ধরা পড়েছে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী স্যালাইনের সঙ্গে সেটিকে কেমো দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহে একটি করে কেমো দিতে হবে। মাস দেড়েক লাগবে প্রাণীটির সেরে উঠতে।
  • Link to this news (বর্তমান)