সংবাদদাতা, করিমপুর: ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে গমের অবশিষ্টাংশ বা নাড়া পোড়ানোনিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রুখতে এই ব্যাপারে চাষিদের সচেতন করছে কৃষিদপ্তর। তারপরেও নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে নজরদারির উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সম্প্রতি জিআইএস(জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) ল্যাব চালু করেছে। করিমপুর ১ ব্লক কৃষি অধিকর্তা মহসিন মণ্ডল জানান, কোন জমিতে নিষেধ অমান্য করে নাড়া পোড়ানো হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে ছবি তুলে সেই জমির লোকেশন, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর ও মালিকের নাম স্থানীয় পুলিসের কাছে জানানো হচ্ছে। সেই মতো আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে পুলিস। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে,ফসল কাটার পরে জমিতে সেই ফসলের শিকড় সহ যে অবশিষ্টাংশ থেকে যায়,তা তুলে ফেলতে হয়। তাতে সময় লাগে আর মজুরি বাবদ বেশ কিছু টাকা খরচ হয়। তাই সামান্য লাভের জন্য জমির ফসলের অবশিষ্টাংশে চাষিরা আগুন ধরিয়ে দেন। বিশেষ করে এখন গম কাটার মরশুম। এই সময় দ্রুত জমি পরিষ্কার করতে গাছের গোড়াআগুনে পুড়িয়ে দেন চাষিদের একাংশ। এতে ভয়ঙ্কর ভাবে দূষণ বাড়ছে।
করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তরুণ পোদ্দার বলেন, জমির নাড়া পোড়ালে মাটির তাপমাত্রা বাড়ে। ফলে উপকারী ব্যাকটেরিয়া, কেঁচো, ছত্রাক মারা যায়।পরবর্তী ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেতে থাকে। যেখানে অত্যধিক নাড়া পোড়ানো হয় সেই অঞ্চলে মানুষের ফুসফুসের রোগ বেশি হয়। মাটি পোড়ালে মাটি থেকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার বেরিয়ে যায়। খড় বা নাড়া পোড়ালে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক গ্যাস বাতাসে মেশে। এছাড়া নাড়ার আগুন মাঠে ছড়িয়ে গিয়ে বিধ্বংসী আগুনে আশপাশের গ্রাম শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই নাড়া পোড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পুলিস ও করিমপুর দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, করিমপুর এলাকায় গত এক সপ্তাহে ১৭টি জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। নাড়া পোড়াতে গিয়ে একাধিক অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৭০ বিঘা জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যেক বছর এই সময়ে চাষের জমির আগাছা পোড়াতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত সোমবার মুরুটিয়ার ব্রজনাথপুর গ্রামের মাঠে অগ্নিকাণ্ডে তিন বিঘা জমির পটলসহ প্রায় ১৮ বিঘা চাষের জমির গম পুড়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে হোগলবেড়িয়ার দুর্লভপুর মাঠে চাষের জমির গমের নাড়া পোড়াতে গিয়ে প্রায় ১৭ বিঘা জমিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তেহট্টের এসডিপিও শুভতোষ সরকার বলেন, এব্যাপারে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।