অফিসেই আসেন না ডেপুটেশনে থাকা আড়ংঘাটার পঞ্চায়েতকর্মী!
বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: কিছুদিন আগেই আড়ংঘাটা পঞ্চায়েতের কর্মীদের ইচ্ছেখুশি অফিসে আসার বিষয়টি প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’ খবরের কাগজে। এবার খোদ ওই পঞ্চায়েতেরই প্রধান বিডিওর কাছে এক কর্মীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে শোরগোল ফেলে দিলেন। প্রধানের অভিযোগ, যুগলকিশোর পঞ্চায়েতের ডেপুটেশনে থাকা আড়ংঘাটা পঞ্চায়েতের কর্মী শুভজিৎ সরকার দু’বছর ধরে অফিসেই আসেন না! অথচ, নিয়মিত তুলে নেন বেতন। অভিযোগ হাতে পাওয়ার পরেই শুভজিৎকে শোকজ করেছেন রানাঘাট ২ ব্লকের বিডিও শুভজিৎ জানা।
রানাঘাট ২ ব্লকের অধীনে আড়ংঘাটা অঞ্চল যথাক্রমে যুগলকিশোর এবং আড়ংঘাটা পঞ্চায়েতে বিভক্ত। আড়ংঘাটা পঞ্চায়েতের এক কর্মী শুভজিৎ সরকার। যিনি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সংলগ্ন যুগলকিশোর গ্রাম পঞ্চায়েতে ডেপুটেশনে রয়েছেন। প্রায় দু’বছর ধরে কাগজে-কলমে সেই পঞ্চায়েতে অফিস করছেন শুভজিৎ। নিয়মিত তুলছেন বেতনও। কিন্তু বাস্তব ছবিটা অন্য। জানা গিয়েছে, ওই বছর ১ জুনের পর থেকে তাঁকে পঞ্চায়েতে দেখাই যায়নি! ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ওই পঞ্চায়েত কর্মীর বেনিয়াম নিয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন যুগলকিশোর পঞ্চায়েতের প্রধান। তাতেও ওই কর্মীর টনক নড়েনি। এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও তিনি অফিসে আসেননি বলে অভিযোগ। তাঁকে চর্চা চলছে দুই পঞ্চায়েতে। অভিযোগ উঠছে, শুভজিৎ প্রভাবশালী এক তৃণমূল নেতার আত্মীয় বলেই অফিসে না এসে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কে সেই নেতা? স্থানীয় মানুষের দাবি, নদীয় জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা বাণীকুমার রায়ের আত্মীয় এই শুভজিৎ। সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন ধরে এই বেনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাণীকুমারবাবুও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘শুভজিৎ সম্পর্কে আমার ভাগ্নে। যদিও বর্তমানে তাঁর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। দিনের পর দিন অফিসে না গিয়ে বেতন তুলে নেওয়ার কাজকে আমি সমর্থন করি না। এটা গর্হিত অপরাধ।’ প্রশাসন শুভজিতের বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেবে, তাতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
সোমবার আড়ংঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অনামিকা মণ্ডল শুভজিতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রানাঘাটের ২ ব্লকের বিডিও শুভজিৎ জানার কাছে। চিঠিতে তিনি লেখেন, পঞ্চায়েতের কাজ সামলানোর জন্য শুভজিৎকে যুগলকিশোর পঞ্চায়েতে সাময়িক স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখানেও তিনি অফিস করছেন না। অনামিকাদেবী বলছিলেন, ওই পঞ্চায়েত কর্মীকে আমি কোনওদিন অফিসে দেখিনি। শুনেছি তিনি যুগলকিশোর পঞ্চায়েতে কর্মরত। কিন্তু সেখানেও তিনি যান না। তাই বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। শুভজিতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন যুগলকিশোর পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আমি পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাই। সেই থেকে ওই কর্মীকে একদিনও পঞ্চায়েতে দেখিনি। সেই সময় লিখিত আকারে ব্লকে জানিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও ওই কর্মীর দেখা মেলেনি। অথচ তিনি বেতন পাচ্ছেন নিয়মিত। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে একাধিকবার শুভজিৎ সরকারকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও।
রানাঘাট ২ ব্লকের বিডিও শুভজিৎ জানা বলেন, সমস্ত পঞ্চায়েত কর্মী নিয়মিত অফিস আসছে কি না, তা নিয়ে আমরা ব্লক থেকে নজরদারি শুরু করেছি। এরই মাঝে আড়ংঘাটা পঞ্চায়েত প্রধানের একটি চিঠিতে আমি ওই কর্মীর বিষয়ে জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই আমরা তাঁকে শোকজ করেছি। উত্তর পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।