নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ওয়েব টিএমএস ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত চালু করেনি নদীয়া জেলার প্রায় অর্ধেক বেসরকারি নার্সিং হোম ও হাসপাতাল। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় ১৭৪টি বেসরকারি নার্সিংহোম রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৮৮টি নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথীর ওয়েব টিএমএস ব্যবস্থা চালু করতে এগিয়ে এসেছে। বেসরকারি নার্সিং হোমগুলির এই অনীহার কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকরা দেখেছেন, মূলত স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের টাকা হাতানো নিয়ে রাজ্য সরকারের কড়া পদক্ষেপের কারণেই এই প্রকল্প নিয়ে উৎসাহ হারিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলি।
বর্তমানে কোনও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাদের মোটা টাকার জরিমানা দিতে হচ্ছে। নদীয়া জেলায় বিগত তিন বছরে বিভিন্ন নার্সিং হোম থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি জরিমানা আদায় করেছে রাজ্য সরকার।
নদীয়া জেলার স্বাস্থ্য ওসি অজয় সামন্ত বলেন, আমরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নতুন ওয়েব টিএমএস ব্যবস্থা নিয়ে ট্রেনিং করিয়েছি। অনেক জায়গায় এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নার্সিং হোমগুলোর উপর নজরদারিও চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল ভর্তি হওয়া ভুয়ো রোগী ও ভুয়ো অপারেশনের বিল দেখিয়ে সরকারের থেকে টাকা আদায় করা হয়। জনমুখী এই প্রকল্পে অনিয়ম আটকাতে রাজ্য সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে এই প্রকল্পে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার করা, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ, নার্সিং হোমগুলোর উপর চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি চালানো কোনও কিছুই বাদ রাখা হয়নি।
নদীয়া জেলাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোমগুলোতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের বহু উদাহরণ রয়েছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জেলার ২৭টি নার্সিং হোমকে মোট ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়েছে এমনও নার্সিং হোমও আছে।
এবার ওয়েব টিএমস ব্যবস্থা চালু করে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে কার্ডের ব্যবহার তুলে দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। তার বদলে সরাসরি আধার কার্ডের মাধ্যমে এই জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে। নতুন অর্থবর্ষ থেকেই তা চালু হয়েছে বিভিন্ন নার্সিং হোমে। এতদিন একটি পোর্টালের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কাজ করতে হতো নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষকে। সেখানে রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের নম্বর, চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য, ফিঙ্গার প্রিন্ট সহ নানা জিনিস দরকার পড়ত। পাশাপাশি রোগীর অপারেশনের আগে ও পরে একাধিক ছবি তুলে আপলোড করতে হতো নার্সিংহোমকে। সেই সমস্ত ঝক্কি মেটাতেই এই ওয়েব টিএমএস সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কিন্তু নদীয়া জেলার সি ও আর ক্যাটাগরির নার্সিং হোমগুলো তা নিয়ে অনীহা দেখাচ্ছে। জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় এ ক্যাটাগরির ৬টি, বি ক্যাটাগরির ২২টি, সি ক্যাটাগরির ১৩৩টি এবং আর ক্যাটাগরির ১৩টি নার্সিং হোম রয়েছে।