• ছাত্রদের কথা ভেবে চাকরি হারিয়েও ‘গুরুদায়িত্ব’, কর্তব্যে অবিচল অঞ্জনগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক
    বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের তালিকায় রয়েছেন ওঁরা দু’জন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি পোর্টালে তালিকাভুক্ত সবার বেতনের বিশেষ উইন্ডোটিও। তা হলেও কর্তব্যে অবিচল বাদকুল্লা অঞ্জনগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পবনচন্দ্র সরেন এবং অমিত বিশ্বাস। দু’জনেই সময় মেনে স্কুলে আসছেন। ক্লাস নিচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় তদারকিও করছেন। বেতন পাবেন না জেনেও দু’জনে শিক্ষকতা করে চলেছেন। যাকে বলে স্বেচ্ছাশ্রম। তাঁদের ভূমিকাকে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি  কুর্নিশ জানাচ্ছেন অভিভাবকরাও। 

    বিদ্যালয়গুলিতে এখন পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সামেটিভ টেস্ট চলছে। ফলেস পরীক্ষার জন্য এমনিতেই চাপে রয়েছে স্কুলগুলি। তার মধ্যেই শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে চাকরি বাতিল হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। শিক্ষকের অভাবে একাধিক স্কুলে আস্ত একটি বিভাগ বন্ধ হওয়ার মুখে। বাদকুল্লার অঞ্জনগড় উচ্চ বিদ্যালয় সেগুলির একটি। শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী মিলিয়ে চাকরি খুইয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে ৬ জনই শিক্ষক। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির রসায়ন বিভাগ মাত্র দু’জন শিক্ষক ছিলেন। চাকরি গিয়েছে একজনের। ফলে, ল্যাব লাটে ওঠার জোগাড়। কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক ছিলেন একজনই। তিনি অমিত বিশ্বাস। চাকরি গিয়েছে তাঁরও। স্বভাবতই বিভাগটি আপাতত বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সেই অমিতবাবু নিয়মিত স্কুলে এসে ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি আবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যও। অমিতবাবু মঙ্গলবার বলছিলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমার একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি হঠাৎ করে চলে গেলে ছাত্রছাত্রীরা আতান্তরে পড়ে যাবে। ওদের কথা ভেবেই আমি ক্লাস করে যাচ্ছি। আমি পুরুলিয়া জেলায় সরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে প্রথম নিয়োগ পেয়েছিলাম। ২০১৬ সালের এসএসসি’তে বসেছিলাম। কৃতকার্য হয়ে নিয়োগ পাই এই স্কুলে। আগের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে, সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, আমরা আগের চাকরিতে ফিরে যেতে পারি। তাই, ব্যক্তিগতভাবে আমার ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে।’ 

    ওই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক পবনচন্দ্র সরেন। এদিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, আর পাঁচটা দিনের মতোই পড়ুয়াদের অঙ্ক করাচ্ছেনতিনি। বেতন পাবেন না জেনেও স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। অঞ্জনগড় হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুপ্রতীপ রায় বলেন, ‘আমার স্কুলের যে ক’জনের চাকরি গিয়েছে তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। প্রত্যেকেই অসাধারণ শিক্ষক এবং তাঁদের পাণ্ডিত্য প্রশংসা করার মতো। সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরলেও শিক্ষাদপ্তরের চিঠি আমাদের হাতে আসেনি। তাই আমি প্রত্যেককেই ক্লাস নিতে অনুরোধ করেছিলাম। অমিতবাবু এবং পবনবাবু সেই অনুরোধ রেখেছেন। ছাত্রদের কথা ভেবে ওঁরা স্কুলে আসছেন। অমিতবাবু না থাকলে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যেত। একইভাবে পবনবাবু না এলে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির অঙ্ক শিক্ষক থাকতেন একজন। দু’জনের জন্য আমার গর্ব হচ্ছে।’ -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)