বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: এলপিজির কাঁচামালের দর গত দু’বছরে ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে এমনই যুক্তি খাড়া করেছিলেন পেট্রলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। অথচ বাস্তব পরিসংখ্যান ঠিক উল্টো কথা বলছে। বিগত ছ’মাস আন্তর্জাতিক স্তরে কাঁচামালের দর প্রায় স্থির ছিল। বরং মার্চে তা কিছুটা কমেও যায়। তার উপর ভিত্তি করে এপ্রিলে রান্নার গ্যাসের দাম ধার্য হওয়ার কথা। অর্থাৎ, অগ্নিমূল্য বাজারে সামান্য সুরাহা পাওয়ার আশা ছিল। অথচ উল্টে দাম বাড়িয়ে দিলে মোদি সরকার। সেটাও প্রথা ভেঙে, একেবারে মাসের মাঝখানে। সংশ্লিষ্ট মহলের তোপ, এলপিজির কাঁচামালের দাম নিয়ে সত্য গোপন করছে কেন্দ্র। এটা মোদি সরকারের নয়া ‘জুমলা’!
এদেশের রান্নার গ্যাসের দর নির্ভর করে মূলত দু’টি উপাদানের উপর— প্রোপেন ও বিউটেন। সৌদি আরবীয় সংস্থা অ্যারামকো প্রতি মাসে এই দুই উপাদানের দর ঘোষণা করে। তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী মাসের গোড়াতেই রান্নার গ্যাসের দাম ঘোষণা করে কেন্দ্র। এবার অবশ্য তার একসপ্তাহ পরে হঠাৎ তা ৫০ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা এল। নেপথ্য কারণ হিসেবে মোদির মন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পর্যন্ত এলপিজি কাঁচামালের দর ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সরকার গ্যাসের দাম বাড়ায়নি। বরং গত বছর সিলিন্ডার পিছু দাম ১০০ টাকা কমানো হয়েছে। সেই কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি বিপুল অঙ্কের ‘ক্ষতির’ মুখে পড়ছে। যদিও ১০০ টাকা দাম কমানো হয়েছিল ঠিক লোকসভা ভোটের আগে। নির্বাচনে ফায়দা তুলতেই যে সেই পদক্ষেপ, সেব্যাপারে কারও সন্দেহ নেই। তবে তার থেকেও অবাক করা তথ্য হল, গত ছ’মাসে অ্যারামকোর দর মোটামুটি ৬২৫ থেকে ৬৩৫ ডলারেই ঘোরাফেরা করেছে। গত জানুয়ারিতে প্রোপেন ও বিউটেনের দর ছিল যথাক্রমে টন পিছু ৬২৫ ও ৬১৫ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে ৬৩৫ ও ৬২৫ ডলার। আর মার্চে ৬১৫ ও ৬০৫ ডলার। অর্থাৎ মার্চে দাম কমেছিল অনেকটাই।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধির আঁচে সাধারণ মানুষ পুড়লেও, তাদের উপর আরও আর্থিক বোঝা চাপানোয় কোনও খামতি রাখছে না মোদি সরকার। বরং এখন তেল সংস্থাগুলির হয়ে কাঁদছে। অর্থাৎ তাদের মুনাফা বাড়ানোই এখন কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। রান্নার গ্যাসের ডিলাররা বলছেন, মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি কাঁচামালের দর কমার প্রভাব পড়েছিল বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের উপর। ৪৪.৫০ টাকা দাম কমে। কিন্তু তখন সুরাহা দেওয়া হয়নি গৃহস্থের গ্যাসে। বরং তা এবার বাড়িয়ে দেওয়া হল।
আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল পিছু অপরিশোধিত তেলের দর তলানিতে এসে ঠেকলেও, তার সুবিধা পেট্রল ও ডিজেলে দেয়নি মোদি সরকার। বরং লিটার পিছু ২ টাকা শুল্ক চাপিয়ে দাম একই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ জ্বালানির দর কমলেও সুরাহা দেওয়া হয়নি আম জনতাকে। কিন্তু এলপিজির কাঁচামালের দাম ‘বৃদ্ধি’র অজুহাত খাড়া করে বাড়ানো হল গ্যাসের দাম।
মোট কথা, সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলতে একেবারে আটঘাট বেঁধে নেমেছে মোদি সরকার, বলছে অনেকেই।