• ‘বিল আটকানোর এক্তিয়ার নেই রাজ্যপালের’, তোপ সুপ্রিম কোর্টের, ২৩টি বিল নিয়ে আশাবাদী বাংলা
    বর্তমান | ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • নয়াদিল্লি ও নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একের পর এক বিল পাশ হয়েছে বিধানসভায়। কিন্তু তা আইনে পরিণত করা যাচ্ছে না। কারণ, .গুলি আটকে রেখেছে রাজভবন। তামিলনাড়ু থেকে বাংলা—সর্বত্র রাজ্যপালের এই ভূমিকায় ক্ষোভ চরমে। বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল এভাবে আটকে রয়েছে এম কে স্ট্যালিনের রাজ্যে। সেই ঘটনায় এবার তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবির ভূমিকার কড়া সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের তোপ, রাজ্যপালের এহেন কর্মকাণ্ড ‘অবৈধ’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’। এদিন শুনানিতে দুই বিচারপতি সাফ জানিয়েছেন, বিল আটকানোর এক্তিয়ার নেই রাজ্যপালের। তা সত্ত্বেও রাজ্যপাল যেভাবে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য ১০টি বিল রেখে দিয়েছিলেন, তা সংবিধানের পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। তিনি বলেন, ‘এই রায় শুধু তামিলনাড়ু নয়, দেশের সমস্ত রাজ্যের জয়।’ বাস্তবিকই এই রায়ে আশার আলো দেখছে বাংলা।

    অবিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজভবন ও সরকারের সংঘাত অবশ্য নতুন কিছু নয়। বর্তমান উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকার বাংলার রাজ্যপাল থাকাকালীন একই অভিযোগ উঠেছিল। রাজভবনে সি ভি আনন্দ বোস আসার পরও সেই ছবি বদলায়নি। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া ২৩টি বিল আটকে রয়েছে রাজ্যপালের কাছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পড়ে রয়েছে সেই ২০১৬ সাল থেকে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বিলগুলির ‘উজ্জ্বল’ ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিধানসভায় পাশ হওয়া ২৩টি বিল রাজভবনে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ধর্ষণ বিরোধী অপরাজিতা বিল, গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল, হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত বিলও রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর রাজ্যপাল ওই ২৩টি বিল নিয়ে দ্রুত সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশাবাদী।’

    এদিন মামলার শুনানিতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০-র প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। জানিয়েছে, রাজ্যপাল চাইলে কোনও বিলে সম্মতি না দিয়ে, সেটি বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে পারেন। কিন্তু বিধানসভা থেকে সেই বিলটি পুনরায় পাঠানো হলে রাজ্যপাল তা আর ফেরত পাঠাতে পারেন না। তবে কোনও বিলকে জাতীয় স্বার্থ বা রাজ্যের নীতির পরিপন্থী বলে মনে করলে, সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর জন্য রেখে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য কোনও বিল আটকে রাখতে পারেন না রাজ্যপাল। এব্যাপারে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন দুই বিচারপতি। জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া তিন মাস একটি বিল সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। কিন্তু বিধানসভায় পুনর্বিবেচনার পর সেটি ফের যদি রাজভবনে পাঠানো হয়, সেক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে তাঁকে অনুমোদন দিতে হবে। অবশ্য এই সিদ্ধান্ত যে কোনওভাবেই রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করছে না, সেকথাও জানিয়েছে কোর্ট।
  • Link to this news (বর্তমান)